ভারতের শুল্ক কর্তৃপক্ষ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রযুক্তি জায়ান্ট স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণামূলকভাবে শুল্ক ফাঁকি’র অভিযোগ এনেছে। প্রতিষ্ঠানটির কাছে দাবি করা হয়েছে ৫২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক এবং আলাদাভাবে ৭ কর্মকর্তার নামে ৮১ মিলিয়ন ডলারের জরিমানা। অর্থাৎ মোট ৬০১ মিলিয়ন ডলারের দাবি করা হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকার সমান।
কোরিয়া থেকে আমদানি, বিক্রি মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্সকে
২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে স্যামসাং ‘রিমোট রেডিও হেড’ নামের ৪জি নেটওয়ার্কিং যন্ত্রাংশ আমদানি করে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে। পরে এসব যন্ত্র মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্স জিওকে বিক্রি করে। সেই সময় এই আমদানির মূল্য ছিল ৭৮৪ মিলিয়ন ডলার।
“ভুল শ্রেণীকরণে” শুল্ক ফাঁকি
ভারতের শুল্ক বিভাগের অভিযোগ, এই পণ্য আমদানির সময় স্যামসাং ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল শ্রেণীতে পণ্যটি তালিকাভুক্ত করেছে, যাতে করে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যায়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারত সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে ৫২০ মিলিয়ন ডলার শুল্ক পরিশোধের নির্দেশ দেয়। স্যামসাং অবশ্য এই অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে।
স্যামসাংয়ের পাল্টা অভিযোগ: “আমাদের জানানো হয়নি”
মুম্বাইয়ের কাস্টমস এক্সাইজ ও সার্ভিস ট্যাক্স অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা ২৮১ পাতার আপিল নথিতে স্যামসাং দাবি করেছে—শুল্ক কর্তৃপক্ষ এবং রিলায়েন্স জিও আগে থেকেই জানতো তারা কীভাবে আমদানি করছে।
তাঁরা বলেন, ‘২০১৭ সাল পর্যন্ত রিলায়েন্সও একই পণ্য একইভাবে আমদানি করেছে—কোনো শুল্ক ছাড়াই।’ তাই শুধু স্যামসাংকে টার্গেট করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও ইঙ্গিত দেয় তারা।
তদন্তে বেরিয়ে এলো পুরনো সতর্কতা
তবে ভারতের শুল্ক তদন্তে বলা হয়, রিলায়েন্সকে ২০১৭ সালেই পণ্য শ্রেণীকরণে ভুলের জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। যদিও স্যামসাং দাবি করেছে, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য তারা কখনো পায়নি।
স্যামসাং আরও বলেছে, ‘শুল্ক কর্তৃপক্ষ আমাদের শ্রেণীকরণ সম্পর্কে জানতো। কিন্তু কোনো সময় প্রশ্ন তোলে নি।’ প্রতিষ্ঠানটি দাবি করছে, ‘তাড়াহুড়ো করে’ জানুয়ারিতে শুল্ক আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।’
ভক্সওয়াগনের পর দ্বিতীয় বড় মামলা
স্যামসাং এই মুহূর্তে দ্বিতীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যারা ভারত সরকারের শুল্ক আদায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গিয়েছে। এর আগে জার্মান গাড়ি নির্মাতা ভক্সওয়াগন ১.৪ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই মামলা?
২০২৪ সালে ভারতে স্যামসাংয়ের আয় ছিল ৯৯৫ মিলিয়ন ডলার। কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে মোবাইল, টেলিকম সরঞ্জাম—প্রায় সবখাতেই প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষে। এই প্রেক্ষাপটে ৬০১ মিলিয়ন ডলারের শুল্ক মামলা শুধু আর্থিক নয়, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কেও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।