পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে থাকা মহাকাশযান ভয়েজার–১–এর বহুদিন বন্ধ থাকা মূল থ্রাস্টারগুলো সফলভাবে আবারও সচল করেছে নাসার প্রকৌশলীরা। দীর্ঘ ২০ বছর পর থ্রাস্টারগুলো চালু হওয়াকে বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন এক ‘অলৌকিক মুহূর্ত’ হিসেবে।
১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে উৎক্ষেপণ হওয়া ভয়েজার–১ এখন অবস্থান করছে আন্তঃনাক্ষত্রিক অঞ্চলে, পৃথিবী থেকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে। মহাকাশযানটির অ্যান্টেনা যাতে সবসময় পৃথিবীমুখী থাকে, সে জন্য ব্যবহার করা হয় একাধিক থ্রাস্টার। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রোল থ্রাস্টার ২০০৪ সাল থেকে বন্ধ ছিল, হিটার ইউনিট বিকল হয়ে যাওয়ায়।
গত দুই দশক ধরে চালু থাকা ব্যাকআপ রোল থ্রাস্টারগুলোরও কার্যক্ষমতা শেষের পথে ছিল। প্রকৌশলীরা আশঙ্কা করছিলেন, অব্যবহৃত জ্বালানির অবশিষ্টাংশ থ্রাস্টারের পথ বন্ধ করে দিতে পারে। এ অবস্থায় একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় নাসার দল।
২০ মার্চ থ্রাস্টার চালুর নির্দেশ পাঠানো হয় ভয়েজার–১–এ। পৃথিবী থেকে সংকেত পৌঁছাতে এবং সাড়া ফিরে পেতে সময় লাগে প্রায় ২৩ ঘণ্টা। একদিন পর যখন ফিরে আসা ডেটায় থ্রাস্টারের হিটারের তাপমাত্রা নাটকীয়ভাবে বাড়তে দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হন—প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।
নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) ভয়েজার মিশনের ব্যবস্থাপক করিম বাদারউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ভাবতাম মূল থ্রাস্টারগুলো চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ভয়েজার আমাদের বারবার বিস্মিত করে।’
জেপিএলের প্রপালশন লিড টড বারবার বলেন, ‘এটি ছিল এক গৌরবময় মুহূর্ত। আমাদের মনোবল ছিল আকাশচুম্বী। একজন প্রকৌশলীর দূরদৃষ্টি ও চিন্তাশক্তির কারণেই এই অলৌকিক ঘটনা সম্ভব হয়েছে।’
মূল থ্রাস্টার আবার সচল হওয়ায় ভয়েজার–১ এখন কক্ষপথে নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে। ভবিষ্যতে মিশনের সঙ্গে যোগাযোগ পুনরায় চালু করার পথ আরও মসৃণ হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।