দেশের বাজারে অবৈধ মোবাইল ফোনের দৌরাত্ম্য আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে বহুবার কঠোর অবস্থানের ঘোষণা এলেও বাস্তবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মূল কারণ—দেশের প্রভাবশালী মহলের একটি অংশ নিজেরাই ব্যবহার করছেন এসব চোরাই ফোন। পাশাপাশি নির্দিষ্ট কিছু চোরাকারবারিকে সুবিধা দিতে রাষ্ট্রীয় নীতির অপব্যবহার হচ্ছে, যার ফলে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতের কারখানার স্বার্থে বাংলাদেশে রপ্তানিনির্ভরতা রুদ্ধ?
সূত্র বলছে, বাংলাদেশের বাজারে সবচেয়ে বেশি অবৈধ মোবাইল ফোন ঢুকছে পাশের দেশ ভারত থেকে। শুধু তাই নয়, ভারতের মোবাইল উৎপাদন খাতের বিকাশে সহায়ক নীতির আড়ালে বাংলাদেশে দেশীয় শিল্পকে চাপে রাখা হচ্ছে, যাতে আমদানিনির্ভরতা বজায় থাকে।
একজন শিল্প বিশ্লেষক বলেন: “আমরা নিজের দেশে ফোন বানাচ্ছি, অথচ সেটার বাজার পাচ্ছি না, কারণ সরকারেরই একটি অংশ চাইছে না এই খাত শক্তিশালী হোক।”
করোনা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ছিল সম্ভাবনার কেন্দ্র
বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারির পর চীন থেকে সরিয়ে মোবাইল উৎপাদনের বিকল্প কেন্দ্র হিসেবে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ভারতের দিকে ঝুঁকছিলো আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। এর সুযোগে বাংলাদেশে ২০টির বেশি মোবাইল কারখানা গড়ে ওঠে, যার মধ্যে কয়েকটি রপ্তানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু এখন সেই সম্ভাবনার পথ রুদ্ধ হতে বসেছে।
চোরাই পথে আসছে লাখ লাখ হ্যান্ডসেট
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস এবং বিটিআরসি সূত্র বলছে:
-
প্রতিবছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ অবৈধ ফোন প্রবেশ করছে দেশে
-
এই ফোনগুলোর মাধ্যমে ৮০০ থেকে ১২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে
-
অধিকাংশ ফোনের আইএমইআই নম্বর জাল বা রেজিস্ট্রেশনবিহীন
-
২০২৩ সালে চালু হওয়া NIRMS (আইএমইআই রেজিস্ট্রেশন) সিস্টেম এখনো কার্যকর নয়
কেন বন্ধ হচ্ছে না?
প্রভাবশালী মহলের ব্যবহার
সরকারি পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাই নিজেরা অবৈধভাবে আনা বিদেশি ফোন ব্যবহার করছেন, যেগুলোর কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। ফলে তারাই চাইছেন না, NIRMS বাধ্যতামূলক হোক।
চোরাকারবারিদের প্রভাব
বিশেষ একটি সিন্ডিকেট নিয়মিতভাবে ভারত থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে আসে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে কাস্টমস ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
নীতিগত দ্বৈততা
একদিকে দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে আমদানি নির্ভরতাই বাড়ছে। সরকার আমদানিকারকদের জন্য শুল্ক ও ভ্যাটে ছাড় দিচ্ছে, কিন্তু দেশীয় কারখানাকে দেওয়া হচ্ছে না একই সুবিধা।
একটি স্থানীয় মোবাইল উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা প্রতিটি ফোনে গড়ে ২০ শতাংশ ভ্যাট দিই, অথচ ভারত থেকে অবৈধভাবে আনা ফোন শুল্কহীনভাবে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে চললে একে একে দেশীয় কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।”