মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস খাতের আলোচিত প্রতিষ্ঠান নগদ এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডাক বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চলে গেল। ২৭ মে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভায় নগদের ভারপ্রাপ্ত সিইও শ্যামল বি দাস পদত্যাগপত্র জমা দেন এবং প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা, শেয়ার কাঠামো ও দৈনন্দিন সব দায়িত্ব ডাক বিভাগকে বুঝিয়ে দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডাক বিভাগের মহাপরিচালক, নগদের ডেপুটি সিইও মো. মুয়িয, নগদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সরকারের প্রতিনিধিরা।
অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় নাজুক নগদ
সূত্র জানায়, নগদের বর্তমান কাঠামো ছিল জটিল ও অস্বচ্ছ। শ্যামল দাস তার আবেদনে উল্লেখ করেন, “আমি যাদের অধীনে এসেছিলাম তারা দীর্ঘদিন ধরে পলাতক। বৈধ নিয়োগপত্র কিংবা চুক্তিপত্র ছাড়া ডিজিটাল সিগনেচারবিহীন ইমেইলের মাধ্যমে আমাকে বেআইনি নির্দেশ পালন করতে বলা হয়।”
তিনি বলেন, “এই অরাজকতা এবং মানসিক চাপে আমি আর দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত নই। জনগণের অর্থ নিয়ে ঝুঁকি নিতে চাই না।”
হিসাব মিলছে না ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসক নিয়োগের মাধ্যমে নগদে বড় ধরনের অডিট চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তদন্তে উঠে আসে, প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকার ই-মানির কোনো হিসাব মিলছে না। অভিযোগ আছে, সাবেক পরিচালকদের অনুকূলে অর্থপাচার, ভূয়া পরিবেশক ও এজেন্টের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, অতিরিক্ত ই-মানি তৈরি এবং জালিয়াতির।
নগদের সরকারি ভাতার একচেটিয়া চুক্তি নিয়েও ওঠে প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঘটনায় ২৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যার মধ্যে রয়েছে একাধিক প্রভাবশালী সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তি।
নতুন দায়িত্বে আবু তালেব
সভায় নগদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ডাক বিভাগের পরিচালক আবু তালেবকে দেওয়া হয়। ডেপুটি সিইও মুয়িয নতুন সিইওকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “নগদ পরিবার একযোগে কাজ করবে।”
নতুন ব্যবস্থাপনা জানিয়েছে, তারা জুয়া, জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং রোধে সরকারের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় করবে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট, এক এনআইডিতে একাধিক এমএফএস বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
অতীত ইতিহাস
২০১৭ সালে ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামে কোম্পানিটি নগদ হিসেবে রি-ব্র্যান্ড হয়। ২০১৯ থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ভাতা বিতরণসহ একক আধিপত্যে চলে আসে। বর্তমানে ৯ কোটির বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে নগদের।
জনস্বার্থে দায়িত্ব হস্তান্তর
শ্যামল দাস বলেন, “দেশের কোটি কোটি মানুষ নগদের মাধ্যমে আর্থিক সেবা নেয়। এই সংকটময় মুহূর্তে জনস্বার্থেই দায়িত্ব হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”