হুয়াওয়ের কালো তালিকাভুক্ত করার কারণে বেশ চাপের মুখে আছে যুক্তরাষ্ট্র । চীনা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মোবাইল ও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চীন থেকে দুর্লভ খনিজ সংগ্রহ করতে পাড়বেনা। চীনা কর্তৃপক্ষ বলেছে, অবিশ্বস্ত বিদেশি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে তারা।
শুক্রবার ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হুয়াওয়ে তাদের কর্মীদের মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব ধরনের কারিগরি বৈঠক নিষিদ্ধ করেছে। এ ছাড়া হুয়াওয়ের চীনা সদর দপ্তরে কর্মরত যুক্তরাষ্ট্রের সব কর্মীকে ফেরত পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
হুয়াওয়ের কালো তালিকাভুক্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছে গুগল। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি প্রশাসনকে অনুরোধ করেছে, হুয়াওয়েকে যেন নিষিদ্ধ করা না হয়। যদি তাই হয় তবে গুগলের প্রযুক্তি ব্যবসাতেও তার বড় ধরনের আঁচ লাগতে পারে। এমনকি সেটিই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। গুগল মার্কিন সরকারকে এটা বোঝাতে চায় যে, যদি হুয়াওয়েকে নিষিদ্ধ করা হয় তবে তারা যে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করবে তাতে করে বরং মার্কিন একটি কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেমের একচেটিয়াত্বের ইতি ঘটতে পারে। যা মার্কিন প্রসাশনের জন্যও খুব একটা ভালো হবে না বলে বলছে গুগল। গুগল চাইছে হুয়াওয়ে যেন তাদের অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের ওপরেই নির্ভরশীল থাকে। সেটাই মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো হবে।
গুগলের লবিং প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির বরাতে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গুগল উদ্বেগ রয়েছে। তারা ভাবছে, হুয়াওয়ের স্মার্টফোনে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম আপডেট দিতে না পারলে তখন হুয়াওয়ে দ্রুত অ্যান্ড্রয়েডের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করবে। গুগল যুক্তি দেখাচ্ছে, হুয়াওয়ে যদি অ্যান্ড্রয়েডের নিজস্ব সংস্করণ তৈরি করে, তবে তা হ্যাকিংয়ের জন্য আরও বেশি ঝুঁকির তালিকায় থাকবে।
ওয়াল স্ট্রিটের একজন বিশ্লেষক জিম সুভা জানিয়েছেন হুয়াওয়ের কালো তালিকাভুক্ত করার কারণে অ্যাপলের বার্ষিক লাভে বড় ধরনের ধ্বস নামবে। তিনি বলেন চীনে ২০২০ অর্থবছরে আইফোন রপ্তানি অর্ধেকে নেমে আসবে।বর্তমনে চিনে আইফোন ব্যবহার কারি অর্ধেকের নিচে চলে এসেছে । এখন যেখানে তাদের রপ্তানি ৩৩ মিলিয়ন ২০২০ সালে তা ১৬.৮ মিলিয়নে নেমে আসবে। এবং এর ফলে অ্যাপলের শেয়ারেও বড় ধরনের দর পতন ঘটবে, ১২.৯১ ডলার মূল্যের প্রত্যেকটি শেয়ারের দাম ১১.৪৯ ডলারে নেমে আসবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এক দেশ অন্য দেশের সাথে যুক্ত তাই সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা শিগ্রই তুলে নিতে মার্কিন প্রশাসনকে অনুরোধ করেন অ্যাপলের বিনিয়োগকারীরা।
চীনভিত্তিক টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ের ওপর গুগলের নিষেধাজ্ঞার ফলে ৪২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক রাজস্ব হারাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি টাকায় যা সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি (৩৫৭৪ কোটি ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০)। মার্কিন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাচ সতর্ক করে বলেছে, হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় অ্যাপলের ব্যবসায় ঝুঁকি তৈরি হবে। সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে আইফোন নির্মাতার বৈশ্বিক মুনাফা ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। কারণ, আইফোনের মোট বিক্রির ১৭ শতাংশই হয় চীনে।
এইদিকে হুয়াওয়ের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে মালয়েশিয়া ও রাশিয়া । ৫ জি সেবা উন্নয়নের জন্য রাশিয়ান টেলিকম কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে হুয়াওয়ে। এই চুক্তির আওতায় আগামী বছর থেকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ৫ জি সেবা উন্নয়নে কাজ করে যাবে প্রতিষ্ঠান দুটি। টোকিওতে ফিউচার অব এশিয়া সম্মেলনে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং নিরাপত্তা নিয়ে আপত্তির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মালয়েশিয়া যতোটা সম্ভব হুয়াওয়ের পণ্য ব্যবহার অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ।
চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়েকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির কঠোর সমালোচনা করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এ ধরণের কর্মকাণ্ড কেবল বাণিজ্য যুদ্ধই নয়, বিশ্বকে সত্যিকারের যুদ্ধের দিকেও ঠেলে দিতে পারে। শুক্রবার সেইন্ট পিটার্সবুর্গ ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে গত ১৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুয়াওয়েকে কালো তালিকাভুক্ত করার আদেশ দেয়। পরে গুগলের সঙ্গে ব্যবসায়ীক চুক্তি বাতিল হয়ে যায়। ফলে অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের উপর কিছুটা কড়াকড়ি আসে। সেই সময়ের মধ্যেই অবশ্য হুয়াওয়ে নিজেদের নতুন অপারেটিং সিস্টেম আনার ঘোষণা দেয়।