যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলাফল উভয় দেশের প্রতিষ্ঠানের জন্য সংকটপূর্ণ হয়ে উঠছে। হুয়াওয়ের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও কালো তালিকাভুক্ত করে এ যুদ্ধকে আরো উসকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন চীন বদলা নিতে চাইলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল। কারণ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হলেও সিংহভাগ পণ্য তৈরি হয় চীনে। তাইওয়ানের চুক্তিভিত্তিক ইলেকট্রনিকস পণ্য নির্মাতা ফক্সকন তাদের চীনে স্থাপিত কারখানায় আইফোন ও আইপ্যাডসহ অ্যাপলের বেশির ভাগ পণ্য উৎপাদনের কাজ করে আসছে। অ্যাপল কি তাহলে বিপদে পড়তে যাচ্ছে?
ভবিষ্যতে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনে উৎপাদিত আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহ করতে পারবে না অ্যাপল। বাস্তবিক অর্থে এমন হলে তা প্রতিষ্ঠানটির জন্য বড় ধাক্কা হবে। তাহলে এ অনিশ্চয়তার সমাধান কী?
অ্যাপলের প্রধান পণ্য সরবরাহকারী ফক্সকনের এক জ্যেষ্ঠ নির্বাহী জানিয়েছেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যদি এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় যে তারা চীনে উৎপাদিত আইফোন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সরবরাহ করতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইউনিট আইফোন চীনের বাইরে থেকে উৎপাদন ও সরবরাহ করবে। এ নিয়ে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ফক্সকনের সেমিকন্ডাক্টর বিজনেস গ্রুপের প্রধান ইয়ং লিয়ু বলেন, চীন থেকে আমরা সিংহভাগ পণ্য উৎপাদন করে আসছি। তবে আমাদের মোট উৎপাদন সক্ষমতার ২৫ শতাংশ চীনের বাইরে। কাজেই বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যদি চীনে উৎপাদিত আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে সরবরাহে জটিলতা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য অ্যাপলের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমরা চীনের বাইরে থেকে উৎপাদন করব। কাজেই বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট যেকোনো পরিস্থিতি অ্যাপলের ব্যবসায় খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করি না।
তিনি বলেন, চীনের বাইরের উৎপাদন কারখানা কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের জন্য অ্যাপলের চাহিদা পূরণের যথেষ্ট সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। এজন্য আমরা শুধু অ্যাপলের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি। আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন এরই মধ্যে বেশকিছু চীনা পণ্যে আমদানি শুল্ক আরো ২৫ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা চলতি মাসের শেষদিকে কার্যকর হতে পারে। চীনা পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে চীনে আইফোন উৎপাদন নিয়ে অ্যাপলকে নতুন করে ভাবতে হবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আমদানীকৃত ফোন, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট ডিভাইসের পাইকারি বিক্রিমূল্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিভাইস বাজার অ্যাপলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতিষ্ঠানটির আইফোন বিক্রি থেকে রাজস্বের এক-তৃতীয়াংশই স্থানীয় বাজার থেকে আসে।
বিশ্লেষকদের ভাষ্যে, অ্যাপল যদি চীনে উৎপাদিত আইফোন স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে চায়, তাহলে অতিরিক্ত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের দাম ৯ থেকে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো লাগতে পারে। এটা করা হলে বৈশ্বিক বাজারে আইফোনের চাহিদা কমবে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। শুধু চাহিদার ক্ষেত্রেই নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অ্যাপলের শেয়ারপ্রতি আয়ের ওপরও। আইফোনের দাম বাড়ানোর ফলে চাহিদা কমলে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় ৬ থেকে ৭ শতাংশ কমে যাবে।
অ্যাপল এমন এক গ্রাহক, যা ফক্সকনের রাজস্বের অর্ধেক জোগান দিয়ে আসছে। বৈশ্বিক বাজারে আইফোনের চাহিদা কমলে নিশ্চিতভাবে ফক্সকনকে উৎপাদন কমানোর নির্দেশ দেবে অ্যাপল। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যাতে আইফোন উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি না হয়, তার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফক্সকন এরই মধ্যে ভারতে আইফোনের নির্দিষ্ট কিছু মডেলের উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে।