অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল গ্রামীণফোন ও রবির পাওনা আদায় নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিরসনে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা ইতিবাচক হলেও বিটিআরসির জন্য খারাপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর দেয়া সিদ্ধান্ত যদি বিটিআরসির চেয়ারম্যান বা টেলিযোগাযোগমন্ত্রী প্রদান করতেন তাহলে এটি ছিল শোভনীয়। স্বাধীন একটি কমিশনের ওপর এভাবে হস্তক্ষেপ এবং টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ এর বাইরে গিয়ে দেয়া বিটিআরসির জন্য ভবিষ্যতে সুফল বয়ে আনবে না। এতে করে ভবিষ্যতে নিয়ন্ত্রক কমিশনের নেয়া কোন সিদ্ধান্ত কোন অপারেটর মানবে কিনা এ নিয়ে সন্দেহ আছে।
মহিউদ্দিন বলেন, ব্যান্ডউইথ কমানোর পর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গ্রাহকদের সমস্যার কথাটি তুলে ধরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা আরবিটেশন করার নিয়ম না থাকায় আমাদের দাবী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। উল্টো সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও আমাকে গ্রামীণফোন-রবির উমেদারি করছি বলে দোষারোপ করেছিলেন।
আমাদের এখন প্রশ্ন প্রকৃত উমেদার তাহলে কে? সেই রহস্য উন্মোচন করা দরকার। জাতীয় যে কোন সংকটে সরকার হস্তক্ষেপ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গ্রাহকদের স্বার্থরক্ষা ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করতে ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারি একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে ২০০১ সালে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা হয়।
এই আইনে নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে ‘স্বাধীন কমিশন’ বলা হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের পূর্বেই আপত্তি ছিল। কারণ এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনের সদস্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হয়। কিন্তু স্বাধীন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য নিযুক্ত হওয়ার কথা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক। আবার ট্যারিফ নির্ধারণে সরকার ও কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব কমিশনে নিষ্পত্তি করার কথা। অথচ এক্ষেত্রে ট্যারিফ নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয় আর প্রস্তাব করে কমিশন।
তিনি বলেন, বাংলালিংক জন্মের পর থেকে আজ অবধি লোকসান দেখাচ্ছে। যা বিশ্বে বিরল। কোন বিদেশি কোম্পানি দূরে থাক, কোন সরকারও ২০ বছর ধরে কোন প্রতিষ্ঠান লোকসানে চালাবে না। আজ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটি অডিট করা হয়নি। ভবিষ্যতে অডিট করলে সেই অডিট বাংলালিংক মানবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বলেন, একটি স্বাধীন কমিশনের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের ফলে গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি গ্রাহকরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এই যদি হয়, তাহলে প্রশ্ন দেশীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটিসেল, ওয়ানটেল, র্যাংগসটেল, ঢাকা ফোন, সেবা ফোন বন্ধ হল কেন?
গ্রাহকদেরও কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ ছিল এ সকল প্রতিষ্ঠানে। টেলিযোগাযোগ সেবা নিশ্চিত করতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থাকার পরও একটি স্বাধীন কমিশন করার প্রয়োজনীয়তা ছিল কিনা প্রশ্ন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।