ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোর পাশাপাশি দেশের প্রায় ৪০টি জেলাতে ফোরজি চালু করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক। তবে চতুর্থ প্রজšে§র ইন্টারনেট সেবা ফোরজি চালু করলেও গ্রাহক টানতে পাচ্ছে অপারেটরটি। উল্টো গ্রাহক কমে গেছে টেলিটকের।
সূত্রমতে, গেল বছর কয়েক দফা ফোরজি সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয় টেলিটক। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই অনেকটা নীরবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ফোরজি চালু করে অপারেটরটি। তবে এর পর ছয় মাসে টেলিটকের গ্রাহক কমে গেছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, গেল বছরের ডিসেম্বরে টেলিটকের গ্রাহক ছিলো প্রায় ৩৮ লাখ ৫৪ হাজার। তবে ফোরজি চালু হলেও অপারেটরটির গ্রাহক না বেড়ে উল্টো কমেছে। জুন শেষে অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৩৮ লাখ ৩৬ হাজার। অর্থাৎ ছয় মাসে ১৮ হাজার গ্রাহক কমে গেছে কোম্পানিটির। তবে এখনও অপারেটরটি নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন সরকার।
এদিকে নাম্বার ঠিক রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) সেবা চালুর পর টেলিটক থেকে অন্য অপারেটরে চলে গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার গ্রাহক। যদিও টেলিটক থেকে অন্য অপারেটরে যেতে বাঁধার সম্মুখীন হয় প্রায় ৬ হাজার ৩৯৬ জন গ্রাহক। আর অন্য অপারেটর থেকে টেলিটকে এসেছে প্রায় ৩ হাজার ৩০৯ জন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ বৃদ্ধি ও ফাইভজি সেবা প্রদান ও অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কোরীয় একটি প্রতিষ্ঠান এলজিইউ প্লাস থেকে ১০০ কোটি ডলার (প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা) ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘অন্য অপারেটরগুলোর সঙ্গে কমপিটিশনে করতে হলে অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে টেলিটককে গতিশীল করতে হবে। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি। এর প্রেক্ষিতেই আমরা এলজিইউর থেকে কম সুদে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। যেটি ৩ শতাংশ হারে ২৫ বছরের জন্য নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি এটি বাস্তবায়ন হলে টেলিটকের চিত্র বদলে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে দেশের সবগুলো বিভাগীয় শহরের পাশাপাশি দেশের প্রায় ৪০টি জেলাতে ফোরজি সেবা পৌছাতে সক্ষম হয়েছে টেলিটক। আশা করছি দ্রæতই বাকি জেলাগুলোতে ফোরজি প্রদানে সক্ষম হবো।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরশেষে টেলিটকের গ্রাহক ছিল ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার। তবে রাষ্ট্রায়ত্ত¡ এ অপারেটরটির সর্বোচ্চ গ্রাহক ছিল ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। ওই মাস শেষে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ লাখ ৫৩ হাজার। এ হিসাবে গত ১৭ মাসে অপারেটরটির গ্রাহক কমেছে প্রায় সাত লাখ।
এদিকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি গ্রাহক সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছালেও পরের মাসেই তা কমে দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৮৮ হাজার ও মার্চে ৩৯ লাখ। এছাড়া চলতি বছর মার্চে টেলিটকের গ্রাহক ৪০ লাখ অতিক্রম করেছিল। তবে পরের মাস থেকেই তা কমে শুরু করে।
যদিও টেলিটকের সেবা গ্রহণকারীদের অভিযোগের শেষ নেই। সম্প্রতি কয়েকজন গ্রাহকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, ‘ফোরজি চালুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত টেলিটকের সেবা নিয়ে অনেক আশা থাকলেও বাস্তবে তার মিল নেই। নেটওয়ার্ক সক্ষমতা কম থাকায় কলড্রপ যেমন বাড়ছে, ইন্টারনেটেও ধীরগতি হচ্ছে। ফোরজি সেবায় অন্যান্য অপারেটগুলোর চেয়েও টেলিটকের সেবার মান খুবই খারাপ।’
চট্টগ্রামের অধিবাসী আব্দুল হালিম জয় প্রায় তিন বছর ধরে টেলিটক ব্যবহার করছেন। সাশ্রয়ী মূল্য কথা বলার পাশাপাশি সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধার কারণে টেলিটক ব্যবহার করছেন তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ফোরজির অপেক্ষায় টেলিটকের থ্রিজি সেবার মান ভালো। ফোরজি চালু হলেও সেটি নামে মাত্র, কাজে নেই। বরং ফোরজিতে টেলিটক অন্য অপারেগুলোর চেয়েও অনেক পিছিয়ে। ইন্টারনেট প্যাকেজ ক্রয় করেও ইন্টারনেটের ধীরগতির কারনে তা ব্যবহারে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।’ চাকরির আবেদন ছাড়া এখন আর টেলিটক আগের মতো ব্যবহার করা হয় না বলেও জানান তিনি।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান জানান, ‘টেলিটক ফোরজি ব্যবহারে অভিজ্ঞতা খারাপ হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক থাকছে না। অনেক সময় নেটওয়ার্ক থাকলেও ইন্টারনেটে স্পিড থাকে না। কলড্রপও বাড়ছে।’
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘দেশের বেসরকারী অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্ক টেলিটকের তুলনায় দ্বিগুন হওয়াই টেলিটক অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। তবে ফাইজি প্রযুক্তির জন্য টেলিটককে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি টেলিটক সবার আগে ফাইভজি সেবা প্রদানে সক্ষম হবে।’