দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ও মোবাইল ফোন গ্রাহকদের মানসম্পন্ন সেবা প্রদান এবং দেশে পরিচালিত মোবাইল ফোন অপারেটর ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের (আইএসপি) বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এজন্য কোয়ালিটি অব সার্ভিস (কিউওএস) নীতিমালা করা হয়েছে।
বিটিআরসি জানায়, নতুন নীতিমালার আওতায় মোবাইল ফোনে ভয়েস কল ও দুর্বল নেটওয়ার্ক কাভারেজ, ইন্টারনেটের উচ্চমূল্য, ভয়েস কলের নিম্নমান এবং গ্রাহকসেবার অসন্তুষ্টি দূর করা হবে। এক্ষেত্রে থ্রিজি প্রযুক্তির ইন্টারনেট প্রদানের ক্ষেত্রে ডাউনলোডের সর্বনিম্ন গতি হতে হবে দুই এমবিপিএস। এছাড়া টুজি ইন্টারনেট প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ১৬০ কিলোবিটস বা কেবিপিএস নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ফোরজি প্রযুক্তি চালুর সময় ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত এমবিপিএস। আর ব্রডব্যান্ডের বর্তমান সর্বনিম্ন গতি পাঁচ এমবিপিএস।
একইভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আইএসপির জন্যও কিছু নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে। আইএসপি অপারেটরগুলোর জন্য বলা হয়েছে, একটি ওয়েবসাইট লোড হতে হবে সাত সেকেন্ডের মধ্যে। অন্যদিকে মোবাইলে কথা বলার (ভয়েস কল) সময় কল ড্রপের হার হতে হবে দুই শতাংশের কম। মোবাইল অপারেটর ছাড়াও আইএসপি, ওয়াইম্যাক্স ও বিটিসিএলের (ল্যান্ডফোন) মতো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কিউওএস নীতিমালা মেনে চলতে হবে।
জানতে চাইলে বিটিআরসির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, ‘গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে বিটিআরসি কাজ করছে। গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ নেই। কোন প্রতিষ্ঠানের সেবার মান কেমন, তা মনিটরিং করতে কোয়ালিটি অব সার্ভিস চালু করা হবে। এটি চালু হলে গ্রাহকদের এখন যে প্রতিকূল অবস্থা তা দূর হবে।’
তথ্যমতে, টেলিযোগাযোগ সেবার মানোন্নয়নে কিউওএস নীতিমালা তৈরি করে বিটিআরসি। এ নীতিমালায় টেলিযোগাযোগ সেবার বিভিন্ন সূচকের মান কী হবে, সেটি পরিষ্কার করা হয়েছে। কমিশনের একটি কারিগরি পর্যবেক্ষণ দল এসব সূচকের মান যাচাই করবে। আর মান নিশ্চিত করতে না পারলে অপারেটরগুলোকে বিটিআরসি জরিমানা করতে পারবে কিউওএস নীতিমালা অনুসারে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘দেশে বিপুলহারে ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী গ্রাহক বাড়ছে। উন্নত মানের সেবা নিশ্চিতে দেশে ফোরজি চালু করা হয়েছে। এরই মধ্যে ফাইভজি’র পরীক্ষা করা হয়েছে। এই যে আমাদের পরিবর্তন হচ্ছে, এর সবকিছুই গ্রাহকদের জন্য। সুতরাং গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। দেশে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সব প্রতিষ্ঠানকেই নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। নীতিমালা উপেক্ষা করে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকে থাকতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা কোয়ালিটি অব সার্ভিস নীতিমালার অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। মন্ত্রণালয়ের কাজ শেষ। এখন এটা বাস্তবায়ন করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। কোন অপারেটরের সেবা কেমন গ্রাহকদের অভিযোগ দেখভাল করবে বিটিআরসি।’
মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সাশ্রয়ী মূল্যে ও দ্রুতগতির ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। ইন্টানেটের গতি ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে বাংলাদেশে ‘ডিজিটালাইজড’ হবে না। ৭৮ হাজার টাকার ব্যান্ডউইডথ যদি ৬০০ টাকায় নিয়ে আসতে পারি তাহলে সে সুযোগ কেন সাধারণ গ্রাহকরা পাবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরির বড় কাজ হচ্ছে সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন সেবা গ্রাহকদের কাছে তুলে দেওয়া। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’