গ্রামীণফোনের মূল প্রতিষ্ঠান টেলিনর বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীর ১৫ শতাংশ বা প্রায় ৩ হাজার পূর্ণকালীন কর্মী ছাঁটাই করবে। আগামী তিন বছরে ধাপে ধাপে কর্মী বাহিনী সংকুচিত করার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে। টেলিনরের কর্মী ছাঁটাই ঘোষণার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ প্রদান নিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে টানাপড়েন সম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাওয়া গ্রামীণফোনের কর্মীদের ওপর। কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ব্যয় সংকোচন, পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজিতে সেবাদান এবং প্রতি বছর লভ্যাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২২ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ২ শতাংশ হারে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জনে কাজ করছে টেলিনর।
টেলিনরের বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যয় সংকোচন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীর ২২ শতাংশ ছাঁটাই করেছে টেলিনর। আগামী তিন বছরে আরো ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি, যা বৈশ্বিক কার্যক্রম নিয়ে টেলিনরের চাপে থাকার ইঙ্গিত মনে করা হচ্ছে।
টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিগভে ব্রেক্কে ২০২০-২২ সালের ব্যবসা কৌশল নিয়ে বলেন, এশিয়ার উদীয়মান টেলিযোগাযোগ বাজারে আমাদের দৃঢ় প্রবৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে। উত্তর ইউরোপ ও উত্তর আটলান্টিক অঞ্চলে ব্যাপক গ্রাহক চাহিদা টেলিনরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।
টেলিনরের দাবি, কর্মী ছাঁটাই, অটোমেশন কাজে লাগানো, পুরনো কপার নেটওয়ার্ক বন্ধ করা এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নতকরণের মাধ্যমে আগামী তিন বছরে বার্ষিক ৩২ কোটি ২০ লাখ ডলার থেকে সর্বোচ্চ ৪৩ কোটি ডলার ব্যয় সংকোচন করা সম্ভব হবে। একই সময় টেলিনর নেটওয়ার্কে সাবস্ক্রিপশন এবং টেলিকম ট্যারিফ থেকে বার্ষিক শূন্য থেকে ২ শতাংশ রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব। এছাড়া অসলোয় তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি বার্ষিক পরিচালন ব্যয় ১ থেকে ৩ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দিয়েছে।
এশিয়া ও উত্তর ইউরোপের নয়টি দেশে টেলিনরের ১৮ কোটি ৬০ লাখ গ্রাহক রয়েছে। গত তিন বছর ব্যয় সংকোচন এবং লভ্যাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যে নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে বাংলাদেশ ব্যতীত অন্য দেশগুলোর কার্যক্রম থেকে খুব বেশি ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। এখন বাংলাদেশেও চাপে রয়েছে টেলিনরের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন।
বিশ্বের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ বাজার ভারত থেকে এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে টেলিনর। পাকিস্তান ও মিয়ানমারেও ভালো অবস্থায় নেই প্রতিষ্ঠানটি। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক রয়েছে টেলিনরের। আয়ের বিবেচনাতেও টেলিনরের অন্যতম সেরা অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোন। তবে নিরীক্ষা আপত্তির অর্থ প্রদান নিয়ে বাংলাদেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সময় পার করছে সেলফোন অপারেটরটি।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চলমান বিরোধ থেকে বেরিয়ে আসতে বিটিআরসিকে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে গ্রামীণফোন। প্রতিষ্ঠানটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বিটিআরসিতে গিয়ে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ১ হাজার কোটি টাকার পে-অর্ডার কমিশনের চেয়ারম্যান জহুরুল হককে হস্তান্তর করে। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত।
ওই সময় বিটিআরসির চেয়ারমান বলেন, গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ। তারা আদালতের নির্দেশ মেনে ১ হাজার কোটি টাকা জমা দিয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো ধরনের মনোমালিন্য নেই।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ একই মাসের ২৪ তারিখের মধ্যে বিটিআরসিকে ১ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রামীণফোনের রিভিউ আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখেন আপিল বিভাগ।
গত বছরের ২৪ নভেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিটিআরসির নিরীক্ষা দাবির ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করতে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগের ওই আদেশ পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গ্রামীণফোন আবেদন করেছিল।