নেদারল্যান্ডসে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নতুন প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। দেশটিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ঠেকাতে সহিংস হয়ে উঠেছে বিরোধী পক্ষ। গত এক সপ্তাহে কয়েকটি সেলুলার টাওয়ারে হামলা চালিয়েছে তারা। খবর টেলিকম লিড।
নেদারল্যান্ডসে ফাইভজি প্রযুক্তির টাওয়ার স্থাপন কার্যক্রম তদারকিতে নিযুক্ত একটি ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপের পরিচালকের বরাত দিয়ে ডাচ দৈনিক ডি টেলিগ্রাফ শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে এমন চারটি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বিরোধী পক্ষ হামলা চালিয়ে টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা সেখানে স্প্রে প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে ফাইভজিবিরোধী স্লোগানও লিখেছে।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের বেশ কয়েকটি গ্রুপ। তাদের মধ্যে কিছু গ্রুপ আশঙ্কা করছে, ফাইভজি টাওয়ার থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। বাকিরা মনে করছে, এ প্রযুক্তি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট করতে পারে।
ডাচ সরকারের নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন কর্তৃপক্ষ এনসিটিভি বলছে, সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে ফাইভজি টাওয়ারে অন্তর্ঘাতী হামলা ও আগুন লাগানোর বেশ কয়েকটি ঘটনার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের বিরোধিতা থেকেই এসব ঘটনা ঘটছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে এনসিটিভি বলেছে, ‘বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। ব্রডকাস্টিং টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে জরুরি সেবাও হুমকির মুখে পড়তে পারে।’
নেদারল্যান্ডসে ফাইভজি স্পেকট্রামের প্রথম নিলাম আগামী ৩০ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ৭০০, ১৪০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম বিক্রি হবে সেই নিলামে, যেখান থেকে অন্তত ৯০ কোটি ইউরো (প্রায় ১০০ কোটি ডলার) আয়ের আশা করছে দেশটির সরকার।
ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে নেদারল্যান্ডসই যে প্রথম সহিংস প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ল তা নয়। নভেল করোনাভাইরাসের বিস্তৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে—এমন গুজবের ওপর ভিত্তি করে গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে বেশ কয়েকটি ফাইভজি টাওয়ারে হামলা চালায় দুষ্কৃতকারীরা। তবে এ ধরনের তথ্য একেবারেই সত্য নয় উল্লেখ করে ব্রিটিশ সরকার জানায়, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সঙ্গে নেটওয়ার্ক টাওয়ারের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এমনিতেই নভেল করোনাভাইরাসের কারণে প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ হুমকির মুখে পড়েছে। ফাইভজি টেলিকম সেবা সবার আগে চালু করে দক্ষিণ কোরিয়া। নতুন প্রজন্মের এ সেবায় বিশ্বনেতৃত্বে আসার সবচেয়ে বেশি সুযোগ ছিল তাদেরই। কিন্তু দেশটির সে আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশটিতে ফাইভজি প্রযুক্তি নিয়ে গ্রাহকদের আগ্রহ কমেছে। এ প্রযুক্তির স্মার্টফোনের বিক্রিও পড়তির দিকে। দক্ষিণ কোরিয়ার এ পরিস্থিতি অন্যদের জন্যও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে ফাইভজি প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক বাজারে চাঙ্গা ভাব ফিরে পাওয়ার আশা করছিল মোবাইল অপারেটররা, সেই প্রযুক্তি নিজেই আজ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।