সম্প্রতি, ‘টেকনোলজি অ্যাগেইনস্ট প্যানডেমিক: ইনসাইটস অ্যান্ড প্র্যাকটিস অন টেলিকম নেটওয়ার্কস’ শীর্ষক শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে। বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক নিয়ে স্পষ্ট ধারণার পাশাপাশি, শ্বেতপত্রে বৈশ্বিক মহামারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টেলিকম নেটওয়ার্কগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয়টিও উঠে এসেছে।
‘ফাইভ-জি প্লাস, বেটার ওয়ার্ল্ড’ অনলাইন সম্মেলনে শ্বেতপত্রটি প্রকাশ করা হয়। স্থিতিশীল টেলিকম নেটওয়ার্ক অনলাইনে মানুষকে শিক্ষা, কেনাকেটা এবং এই বৈশ্বিক মহামারির সময়ে বাসা কিংবা দূরবর্তী স্থানে থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এ শ্বেতপত্রে। শ্বেতপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, এই প্রতিকূল সময়ে স্কুল ও অফিস আদলত যখন বন্ধ রয়েছে তখন শিক্ষা ও বিভিন্ন কাজ সম্পাদন এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে নেটওয়ার্ক। বৈশ্বিক অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্কের সর্বোত্তম অনুশীলনীর মাধ্যমে এই বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার বিষয়টিও শ্বেতপত্রে তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, অপারেটরগুলো ফাইভ-জি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ফাইবার ১০জি পিওএন এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে, যার মাধ্যমে আরও দক্ষভাবে মহামারি মোকাবিলায় নানা অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা যাবে।
চলমান পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করে শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ব্যক্তি, পরিবার, শিল্প ও সরকারিখাতে একই রকম প্রতিকূলতার সৃষ্টি করেছে। যার ফলে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ত্বরাণ্বিত করতে করতে বেশ কিছু নীতিমালা গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, মানসম্পন্ন চিকিৎসা পরামর্শ সহজলভ্য করতে চীন সরকার ‘বিগ ডাটা+গ্রিড’, ‘ইন্টারনেট+ মেডিকেল হেলথকেয়ার’ ও ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)’ সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশেন তৈরিতে বেশ কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। এই সেবাগুলোর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে স্বাস্থ্যগত দিক মূল্যায়ন, স্বাস্থ্যবিষয়ক নির্দেশনা, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য ও মানসিক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ এবং রোগীদের দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতাজনিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলো-আপ (হালনাগাদ তথ্য) করা।
চীন সরকার বড় ধরনের জনস্বাস্থ্যজনিত জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় ফাইভ-জি স্মার্ট হেলথ সিস্টেমে বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি, সম্ভাব্য বৈশ্বিক মহামারির আগাম সতর্কতা হিসেবে ফাইভ-জি প্রযুক্তির বিস্তার, হাসাপাতাল পূর্ব প্রয়োজনীয় সহায়তা, দূরবর্তী স্থানে থাকলেও যথাসময়ে পরামর্শ, দূরবর্তী স্থান থেকে অস্ত্রোপচার, ওয়্যারলেস মনিটরিং, মোবাইল ওয়ার্ড মনিটরিং ত্বরাণ্বিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
ইলেক্ট্রনিক কমিউনিকেশনসের (বিইআরইসি) জন্য ইউরোপিয়ান রেগুলেটরদের ইউ বডি অপারেটরদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্রে ক্ষমতা প্রদান করেছে, যা বৈশ্বিক মাহামারির মধ্যে নেট নিউট্র্যালিটি (নিরপেক্ষতা) নীতির কারণে বন্ধ ছিলো। সঙ্কট মোকাবিলায় সদস্য রাষ্ট্রগুলো এই ধরনের প্রাসঙ্গিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাবনা জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অপারেটরগুলোর নেটওয়ার্কের সর্বোত্তম ব্যবহার, অফ-পিক আওয়ারে ইন্টারনেট ব্যবহারে উৎসাহিত করা ও সেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান।
অনলাইন সম্মেলনে একটি সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের সবাইকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজি মার্কেটিং অ্যান্ড সল্যুশন সেলস ডির্পাটমেন্টের প্রেসিডেন্ট পেং সং। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে শুরু হয়েছে একবিংশ শতাব্দীর তৃতীয় দশক। এ বছর বৈশ্বিক ডিজিটাল রূপান্তর আরও ত্বরান্বিত হবে, যা টেলিকম অপারেটর এবং এ খাতের জন্য একইসাথে সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। অপারেটরদের আরও দ্রুতগতিতে উন্নতি, স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা, ইন্টেলিজেন্ট টার্গেট নেটওয়ার্ক এবং বার্ষিক নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা ও কর্মকাণ্ডের সঠিক নকশা প্রণয়ন করতে হবে, যাতে করে তারা এ সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে। পেং আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অপারেটর ও অংশীদারদের সাথে কাজ করা, মূল্যবান অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান এবং উন্নত টার্গেট নেটওয়ার্ক তৈরির লক্ষ্যেই হুয়াওয়ে ‘ফাইভ-জি প্লাস, বেটার ওয়ার্ল্ড’ অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।’
এ অনলাইন সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিখাতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত থেকে বক্তব্য প্রদান করেন। এদের মধ্যে ছিলেন: চায়না মোবাইল চেংদু ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিন ডা. সু ইউ, সানরাইজের চিফ বিজনেস অফিসার রবার্ট উইগার, ওয়াইআইটিইউ টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট সু শাওমিং, সিসিএস ইনসাইটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার শন কলিন্স এবং হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজির চিফ মার্কেটিং অফিসার বব চাই।