মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) জটিলতায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দামও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সরবরাহকারীদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। এদিকে ভ্যাট কাঠামোর সুরাহার দাবিতে তারা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কর্মসূচির কথা ভাবছেন।
এখন যে ভ্যাটের কাঠামো রয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে তাদের খরচ বাড়বে। এতে ক্রেতা পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম ৩০ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা সংগঠনটির।
আইএসপিএবির নেতারা বলছেন, ভ্যাট কাঠামোর একটি সুরাহার দাবিতে তারা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার কর্মসূচির কথা ভাবছেন। হতে পারে সপ্তাহে একদিন-দুদিন দিনে এক ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে।
আইএসপিএবির সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম বলেন, ‘সব কিছুই ঠিক করা হবে সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে। তার আগে চলতি মাসের মধ্যে সরকার এ বিষয়ে একটি সুরাহা করবে বলে আশা করি।’
আজ শনিবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আমিনুল হাকিম। তিনি জানান, ভ্যাট নিয়ে তাদের মূল সমস্যা হলো, ব্যান্ডউইথ কেনার সময় তারা নিজেরা দিয়ে আসেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট। আর ইন্টারনেট গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করেন ৫ শতাংশ। কোনো রেয়াত পাওয়া যায় না।
আমিনুল হাকিম বলেন, এতদিন এমন হারই ছিল। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। এবার বাস্তবায়ন ছাড়া উপায় থাকবে না। ফলে ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো ছাড়া গতি থাকবে না। অথবা কিছু সময় বন্ধও রাখা যেতে পারে।
সরকার এবারের ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক আরও ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। ফলে মোবাইলে কথা বলা, খুদে বার্তা পাঠানো ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বেড়েছে। অপারেটদের হিসাবে, এখন প্রতি ১০০ টাকা রিচার্জে কথা বলা ও খুদে বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার কর পায় ২৫ টাকা। আর মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সরকার পায় ১৮ টাকার মতো।
করোনাকালে প্রচুর সংখ্যক মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বাসা থেকে অফিসের কাজ করা ও বৈঠক করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেকেই নতুন করে ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাবে, মে শেষে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সংযোগ দাঁড়িয়েছে ৮০ লাখ ৮৪ হাজার, যা ফেব্রুয়ারি শেষে ছিল ৫৭ লাখ ৪৩ হাজার। মানে হলো, তিন মাসে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ বেড়েছে ৪৩ শতাংশ।
আইএসপিএবির মতে, একটি সংযোগের বিপরীতে চার থেকে পাঁচ জন ব্যবহারকারী রয়েছেন। ফলে মোট গ্রাহক প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহকের খরচ বৃদ্ধির আশঙ্কার কথাই জানানো হলো সংবাদ সম্মেলনে।
আইএসপিএবির লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ও মূল্য সংযোজনের অন্যান্য পর্যায়ে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারিত হয়। এই জটিলতা নিরসনে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আলোচনায় ইন্টারনেটের প্রতিটি স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন হয়।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে আবার গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ ও অন্যান্য স্তরে (আইটিসি, আইআইজি, এনটিটিএন) ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ হয়েছে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘হয় আমাদের ভ্যাটের হার শূন্য করেন অথবা সবক্ষেত্রে ৫ শতাংশ করেন, না হয় ১৫ শতাংশ করেন। আমরা দিচ্ছি ১৫ শতাংশ, পাচ্ছি ৫ শতাংশ, এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’ তিনি বলেন, ‘এ মাসের মধ্যে বিষয়টি সমাধান না হলে আমরা ইন্টারনেট বন্ধ রাখার চিন্তা করছি। শুরুতে সপ্তাহে এক দিন এক ঘণ্টা করে বন্ধ থাকতে পারে। পরে ধারাবাহিকভাবে কিছুটা বাড়তে পারে।’
আমিনুল হাকিম দাবি করেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কর্মীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বিল আদায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে গেলেও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি ইন্টারনেট সেবাকে আইটি এনাবেলড সার্ভিস (আইটিইএস) হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করার দাবি জানান। উল্লেখ্য, এ খাতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে।
ব্রডব্যান্ডের নামে নিম্ন মানের ইন্টারনেট সেবা দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল হাকিম বলেন, অনেক এলাকায় পেশীশক্তিধারীদের সঙ্গে পারা যায় না। এ বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসি আর আইএসপিএবি কাজ করছে। আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির উন্নতি আশা করা যায়।
অনুষ্ঠানে সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এফ এম রাশেদ আমিন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, যুগ্মসম্পাদক মঈন উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ মো. সারোয়ার আলম শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।