এ বছরের শুরু থেকেই করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী। বাংলাদেশেও করোনার প্রভাব পরতে শুরু করে ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর থেকে।
লকডাউনের ফাঁদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পেশাজীবী বা ব্যবসায়ী সব শ্রেণীর মানুষ। আয় রোজগার বন্ধ হয়ে পথে বসে যেতে হয়েছে অনেককেই।
এবার করোনার প্রভাব পাওয়া গেল দেশের মোবাইল ব্যবহারকারীদের ওপরও। দেশে কমে গেছে মোবাইল ফোনের সংযোগের সংখ্যা। জানা গেছে, গত তিন মাসে দেশে মোবাইল সংযোগ কমেছে প্রায় ৫০ লাখ। এমন তথ্য স্বীকার করেছে মোবাইল-ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবও।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সবশেষ মে মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের দেখা গেছে, দেশে মোবাইল সংযোগের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ১৫ লাখ ৬ হাজার। লকডাউন শুরুর আগে ফেব্রুয়ারির শেষে সংযোগ সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার। সেই হিসাবে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসে সংযোগ সংখ্যা কমেছে ৪৬ লাখ ৮ হাজার।
এ বছরের মার্চে মোবাইল সংযোগ সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার। আর এপ্রিলে ছিল ১৬ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার।
এ প্রসঙ্গে অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ বছরের শুরু থেকে মোবাইল গ্রাহক কমে আসার বিষয়টি লক্ষ্য করছি আমরা। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে ফেব্রুয়ারি থেকে গ্রাহক সংখ্যা কমতে থাকে। করোনার বিরূপ প্রভাবের কারণে এটা হয়েছে বলে আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, আয়ের নিম্ন সারিতে থাকা মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাছাড়া লকডাউনের কারণে অনেক খুচরা দোকান বন্ধ হয়ে গেছে এবং গ্রাহকরা রিচার্জ পয়েন্টগুলোতে যেতে পারছে না। এর প্রভাব পড়াও স্বাভাবিক। এসব কারণে একদিকে যেমন নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন না তেমন অনেকে আবার হয়তো ইনঅ্যাক্টিভ (নিষ্ক্রিয়) হয়ে গেছেন।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, মে মাসে গ্রামীণফোন ঘোষণা দিয়ে এপ্রিল মাসে মোবাইলে রিচার্জ করেতে পারেননি বা যাদের যাদের ব্যালেন্স নেই এমন এক কোটি মোবাইল গ্রাহককে ১০ মিনিট করে ফ্রি ‘কল মিনিট’ উপহার দেয়। এরপরে মোবাইল অপারেটর রবি তাদের এক কোটি ৩০ লাখ গ্রাহককে ১০ মিনিট করে ‘কল মিনিট’ ও ৫০ এমবি ডেটা উপহার দেয়।
এদিকে মোবাইলের ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা হিসাব করে দেখা গেছে গত তিন মাসে অপারেটরগুলোর ২ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক কমেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ ৩৬ হাজার। মার্চে লকডাউনের সময় তা বেড়ে হয় ৯ কোটি ৫১ লাখ ৬৮ হাজার। এপ্রিলে প্রায় প্রায় ২০ লাখ গ্রাহক কমে তা দাঁড়ায় ৯ কোটি ৩১ লাখ ১ হাজারে। মে মাসে গ্রাহক কিছু বাড়ে।
মে মাসে প্রকাশিত বিটিআরসির প্রতিবেদনে দেখা গেছে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ৪০ লাখ ২৮ হাজার। ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল গ্রাহকের তুলনায় মে মাসে এসে কমেছে ২ লাখ ৮ হাজার গ্রাহক। মার্চ ও এপ্রিল মাসে গ্রাহক সংখ্যা ওঠানামা করেছে।