দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনের অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজে ঢুকে পোস্টপেইড সিমের মালিকানা পরিবর্তন ও ক্রেডিট বাড়িয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট। এ প্রতারণায় জড়িত গ্রামীণফোনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান জিনিক্স ইনফোসিস লিমিটেড ও উইপ্রো লিমিটেড কল সেন্টারের পাঁচ কর্মী।
গ্রেফতাররা হলেন- শুভ্রদেব চক্রবর্তী (২৪), রাজু সরকার (২৬) ও মো. মিজানুর রহমান (৪২)। তাদেরকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার (১০ মার্চ) গভীর রাতে গ্রেফতার করে সিআইডি। গ্রেফতারদের কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ১টি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) রাতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি-মিডিয়া) জিসানুল হক জিসান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে গ্রামীণফোন গত ১ জানুয়ারি ভাটারা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে। মামলাটির তদন্ত করে সিআইডির সাইবার ইনভেস্টিগেশন ইউনিট।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম তালুকদার বলেন, জিনিক্স ইনফোসিস লিমিটেড ও উইপ্রো লিমিটেড গ্রামীণফোনের কল সেন্টার পরিচালনার জন্য থার্ড পার্টি হিসেবে সার্ভিস প্রদানে চুক্তিবদ্ধ হয়। আর গ্রেফতার আসামিরা ওই কল সেন্টারগুলোর কর্মী। সংশ্লিষ্ট অপারেটরের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ডাটাবেজে তাদের প্রবেশাধিকার ছিল। রিটেইলারের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকের সিমের মালিকানা পরিবর্তন, পোস্টপেইড সিমের ক্রেডিট লিমিট বাড়ানোসহ বিভিন্ন সার্ভিস প্রদান করতো তারা।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের আগস্টে কল সেন্টারে কর্মরত আসামিরা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে ১৬টি পোস্টপেইড সিমের ক্রেডিট লিমিট বাড়িয়ে প্রায় ১৩ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে আত্মসাৎ করে। পরবর্তীতে ওই বছরের অক্টোবরে এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে অপর একটি রিটেইলারের আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে একইভাবে ১১টি পোস্টপেইড সিমের ক্রেডিট লিমিট বাড়িয়ে আরও ৭২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল ইসলাম আরও বলেন, পোস্টপেইড সিমে ট্রানজেকশন করা টাকা উত্তোলনের জন্য বিভিন্ন ফ্লেক্সিলোডের দোকানের মালিকের সঙ্গে তাদের চুক্তি থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মিনিট ও ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি বাবদ তারা ওই টাকা ব্যবহার করে। এজন্য তারা ফ্লেক্সিলোডের দোকানদারদের শতকরা ১০ শতাংশ লাভ দিয়ে সিমগুলো বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করে।
মোবাইল অপারেটর কর্তৃপক্ষ যখন দেখে যে, ওই সব পোস্টপেইড সিমে ট্রানজেকশন হওয়া টাকাগুলো তাদের ব্যাংকে জমা পড়েনি তখন তারা পুনরায় বিষয়টি খতিয়ে দেখে। যখন তারা বুঝতে পারে প্রতারণা হয়েছে, তখন সিমের লিমিটের টাকা জব্দ করে দেয়। এ সময়ের মধ্যেও তারা বিপুল পরিমাণ টাকা আটকাতে সামর্থ্য হয়। যদিও এরই মধ্যে প্রতারক চক্রটি প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
সিআইডি জানায়, এ ঘটনার মূলহোতা রাজু সরকার পলাতক। তিনি মোবাইল অপারেটরের সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পোস্টপেইড নাম্বারে লাখ লাখ টাকার ক্রেডিট লিমিট বাড়িয়ে নিতেন। ওই সব পোস্টপেইড নাম্বারগুলো আসামি ও তাদের সহযোগীরা ব্যবহার করতেন। পরবর্তীতে রাজু সরকার তার অপর সহযোগীদের মাধ্যমে গ্রামের দিকে বিভিন্ন গ্রাহকদের কাছে অবৈধভাবে ৫০০ ও ১০০০ মিনিটের প্যাকেজ এবং ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রি করে বিক্রির টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করতেন।
চক্রটি ৫০টি সিম থেকে এক হাজারের বেশি সিমে এইভাবে ট্রানজেকশন করে টাকাগুলো হাতিয়ে নেয়। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিটি প্রথম অভিযোগ করে ১২টি সিমের বিপরীতে। তবে তদন্তে বের হয় প্রায় ৫০টি সিমের তথ্য। মামলার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবেও জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।