একসঙ্গে ১৫৯ জন কর্মীকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করেছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটরটি বলছে, তাদেরকে স্বেচ্ছা অবসর স্কিমের (ভিআরএস) আওতায় অবসর নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সে সুযোগ নেননি।
এর আগে, ২০২০ সালে স্বেচ্ছা অবসর স্কিম (ভিআরএস) নেওয়ার আহ্বান জানালে এই স্কিমের আওতায় গ্রামীণফোনের প্রায় একশ কর্মী চাকরি ছাড়েন। এ বছরের ৩ জুন আবারও এই স্কিমে চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ১৭ জুনের মধ্যে তারা স্কিম নিতে চায় কিনা সেটি গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়। প্রায় একশ কর্মী এবারও স্বেচ্ছা অবসরের আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।
একবারেই ১৫৯ জন কর্মীকে ২০ জুন ই-মেইলের মাধ্যমে নোটিশ পাঠিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ছাঁটাই করে গ্রামীণফোন।
একটি চিঠিতে গ্রামীণফোন জানায়, ডিজিটালইজেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল চাহিদা পূরণে সহায়তা করছে। এই যাত্রায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের দায়িত্ব ও পরিধিতে পরিবর্তন ঘটছে। তাদের কয়েকটি কার্যক্রম অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, প্রায় ১৩ মাস ধরে বেশকিছু কর্মী গ্রামীণফোনে ছিলেন যাদের কোনো কাজ ছিল না। তাদেরকে ছাঁটাই করতে হয়েছে।
গ্রামীণফোন আরও বলছে, তাদের বর্তমান ভিআরএস স্কিমটি কর্মীদের চাকরির মেয়াদ ও পদমর্যাদা বিবেচনায় ১০০ মাস পর্যন্ত বেতনের সমান আর্থিক সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও অবসরে যাওয়ার পরও দুই বছর পর্যন্ত গ্রামীণফোনে কর্মরত অবস্থায় পাওয়া সুবিধা অব্যাহত থাকবে। স্বাস্থ্য ও জীবন বীমার আওতায় অবসরে যাওয়া কর্মী দুই বছর পর্যন্ত তাদের পরিবারের জন্য একই সুবিধা পাবেন।
গ্রামীণফোন সেন্টারের ছাঁটাই হওয়া এক কর্মী বলেন, ‘গ্রামীণফোনে আমাদেরকে প্রত্যেক মাসেই বেতন দেওয়া হচ্ছিল যদিও আমরা গত এক বছর ধরে কাজের বাইরে আছি। যে কাজগুলো আমাদের করার কথা সেগুলো থার্ড পার্টির মাধ্যমে করানো হচ্ছিল।’
তিনি জানান, রোববার অফিস শেষে ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি চাকরিচ্যুত হওয়ার নোটিশ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘গ্রামীণফোন অপারেশনাল খরচ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমাদের ছাঁটাই করেনি। তারা আমাদেরকে বুঝিয়েছে যে, আমাদের আর প্রয়োজন নেই। ভিআরএস গ্রহণ করা ঐচ্ছিক হলেও এটি আমাদের ওপর এটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিয়া মো. শফিকুর রহমান মাসুদ বলেন, ‘অপারেটর ১৮৫ জন কর্মীকে এক বছরেরও বেশি সময় কাজ থেকে দূরে রেখেছে। আমরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ নিয়ে গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি।’
মাসুদ জানান, বিষয়টি এখন হাইকোর্টে বিচারাধীন। মামলার শুনানি হওয়ার আগেই শ্রমিকদের ছাঁটাই হাইকোর্টের অবমাননার সমতুল্য। এটি বেআইনি। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাব এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের আওয়াজ তুলব।
তবে গ্রামীণফোন এক বিবৃতিতে বলেছে, গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) এর সিবিএ হওয়া সংক্রান্ত ইস্যু এবং শ্রম বিভাগের অধীনে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিরোধ সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে তারা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছে।
এ প্রসঙ্গে গ্রামীণফোন এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (জিপিইইউ) এর মাসুদ বলেন, ‘আমরা গ্রামীণফোনের একটি প্রতিষ্ঠিত সিবিএ। সেই অনুযায়ী কাজ বন্ধ রাখা কর্মীদের কাজে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জিপিইইউর প্রতিনিধি দল কাজ করছিল। তারা আমাদের কথা আমলে না নিলে আমরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করি।’
গ্রামীণফোনের এক্সটারনাল কমিউনিকেশনস বিভাগের প্রধান মো. হাসান বলেন, ‘গ্রামীণফোন তার কর্মীদের ব্যাপারে যত্নশীল, এমনকি যেসব কর্মী গ্রামীণফোনের বাইরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন তাদের ক্ষেত্রেও। বাইরে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়াদের সহায়তায় গ্রামীণফোন একটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রামীণফোন কঠোরভাবে নিয়োগের নিয়ম ও দেশের আইন মেনে চলে।’