চলমান কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় ও দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা লকডাউন দেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বৈশ্বিক মহামারির প্রভাবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অগণিত মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য ন্যুনতম জীবিকা অর্জনে লড়াই করতে হচ্ছে। তাই, গত বছরের কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায়, এ বছর ‘ডাকছে আবার দেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াবে ব্র্যাক। প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন ব্র্যাকের সাথে এ উদ্যোগে যুক্ত হয়ে এগিয়ে এসেছে এবং ৩৩ হাজার পরিবারকে সহায়তাদানে। এই উদ্যোগে ব্র্যাক ইতিমধ্যে ৫০ হাজার পরিবারকে সহায়তার ঘোষনা দিয়েছে।
ত্রাণ সহায়তাদানে যুথবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম হিসেবেও কাজ করবে ‘ডাকছে আবার দেশ’; পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্মটি মহৎ উদ্দেশ্যে গণ তহবিল সংগ্রহে এবং প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে অবদান রাখায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করবে।
গ্রামীণফোন এবং ব্র্যাক যথাক্রমে পাঁচ কোটি এবং সাড়ে সাত কোটি টাকা সহায়তা প্রদান করবে। করোনা সংক্রমণের কারণে দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করা মানুষদের খুঁজে বের করবেন ব্র্যাকের দক্ষ মাঠকর্মীরা। এবং এদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তি, গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী নারী, বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি, নারী নেতৃত্বাধীন পরিবার, অতিদরিদ্র ব্যক্তি এবং যারা অন্য কোন জায়গা থেকে সহায়তা পাচ্ছেন না তারাই এ উদ্যোগের মাধ্যমে সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন। প্রতিটি পরিবারকে দেড় হাজার টাকা সমমূল্যের খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হবে।
আজ অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গ্রামীণফোন এই সামাজিক সহায়তা প্রদানের কথা ঘোষণা করেছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান এবং ব্র্যাকের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার তুষার ভৌমিক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “সামাজিক সহানুভূতি ও পারস্পারিক সৌহার্দের মতো বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করেই প্রতিটি দেশের অর্থনীতি গড়ে ওঠা প্রয়োজন। বিশেষ করে, এ সঙ্কটের সময়ে, যখন আমাদের দেশের আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল মানবতা ও সহানুভূতির মধ্য দিয়ে একটি একতাবদ্ধ সমাজ গঠন করা। গ্রামীণফোন এবং ব্র্যাক সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নে কাজ করছে। ‘ডাকছে আবার দেশ’ -এর মতো একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে গ্রামীণফোন ও ব্র্যাকের নিরলস প্রচেষ্টায় আমি সত্যিই মুগ্ধ। আমাদের দেশের ঘুরে দাঁড়াতে এখন এমন যৌথ প্রচেষ্টাই প্রয়োজন।”
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “বৈশ্বিক মহামারির শুরু থেকেই গ্রামীণফোন কোভিড-১৯ এর প্রভাব নিয়ে নানামুখী মূল্যায়ন করে যাচ্ছে এবং এ দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে, সরকারি সংস্থার পাশাপাশি ব্র্যাক এবং আরও অনেক বেসরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান করোনভাইরাসের সুদূরপ্রসারী প্রভাব মোকাবিলায় সামনে এগিয়ে এসেছে।”
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সঙ্কট উত্তরণে আমাদের সহায়তা কার্যক্রম “ডাকছে আমার দেশ’ উদ্যোগের ধারাবাহিকতায়, আমরা এ বছর, বিশেষ করে ঈদের আগে, করোনায় সমাজের বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্র্যাকের সাথে ‘ডাকছে আবার দেশ’ খাদ্য সহায়তামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ও জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের ভূমিকা পালনে এবং এই কঠিন সময়ে সমাজকে ঘুরে দাঁড়াতে সার্বিক সহায়তা প্রদান করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে সবাই এ উদ্যোগে অবদান রাখবেন, আমরা এই প্রত্যাশা করি।”
ব্র্যাকের চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার তুষার ভৌমিক বলেন, “গত বছরের মার্চ থেকে বৈশ্বিক মহামারি আমাদের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করেছে। বিশেষ করে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ যাদের জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, তাদের জন্য এটি কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এই লড়াইয়ে সফলতা অর্জন করতে সকল খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টার কোন বিকল্প নেই। গ্রামীণফোন প্রথম প্রতিষ্ঠান, যারা মানুষদের পাশে দাঁড়াতে আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে এবং আমাদের সাথে যুক্ত হয়ে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমাদের সকল পার্টনার এবং বাংলাদেশের অদম্য জনগণের সাথে মিলে আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। মানুষ যেসব সমস্যা মোকাবিলা করছে সেগুলো দূর করতে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো।”
গত বছরও গ্রামীণফোন এবং ব্র্যাক এই সঙ্কট মোকাবিলায় যৌথভাবে কাজ করেছে। গত বছর এই প্রতিষ্ঠান দু’টি ‘ডাকছে আমার দেশ’-এর মাধ্যমে দুই লাখ পরিবারকে দেড় হাজার টাকা করে প্রদান করেছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্র্যাক অন্যান্য অংশীদারদের অংশগ্রহণে আরও ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষের কাছে পৌঁছাতে ও তাদের সহায়তাদানে সক্ষম হয়। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি জনসচেতনতা বৃদ্ধি, মেডিকেল ফ্রন্টলাইনারদের সহায়তা এবং করোনা সংক্রমণের ম্যাপের জন্য এটুআই’কে ডেটা অ্যানালিটিকসে সহায়তাদানে ডিজি হেলথ, এটুআই, বিটিআরসি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাথে যৌথ উদ্যোগে কাজ করেছে।