সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবার জগত এর কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)তে নতুন করে ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হয়েছে। বিটিআরসিতে যোগদান পরবর্তীতে অনলাইনে গ্রাহকের নিরাপত্তা বিবেচনায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদারের দিকনির্দেশনায় এর কাঠামো বিন্যাসের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। সোমবার বিকেলে বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে কমিশনের চেয়ারম্যান জনাব শ্যাম সুন্দর শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলন এসব কথা জানানো হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উক্ত বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন।
স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সাথে সাথে সাইবার জগতে অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে, এতে অনেকের সামাজিক এবং পারিবারিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় উসকানীমুলক বা এ সংক্রান্ত কোনো কনটেন্ট অপসারণ কিংবা বন্ধ করার অনুরোধ পাওয়া সাপেক্ষে বিটিআরসি কারিগরী ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অতএব, কেউ সামাজিক মাধ্যম দ্বারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহায়তা নিলে বিটিআরসি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
পরবর্তীতে বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি: জে মো: নাসিম পারভেজ জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৮ ধারা এর (১ ও ২) উপধারা অনুযায়ী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সি এর মহাপরিচালক এর মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যম থেকে কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করবে। এরপর বিটিআরসি অবমাননাকর পোস্ট এবং আপত্তিকর কনটেন্ট সরাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে কনটেন্ট রিপোর্টিং সিস্টেম (সিআরএস) এর মাধ্যমে অনলাইনে অনুরোধ জানায়। এরপর তারা তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী কনটেন্ট অপাসারণ করে। এছাড়া, সরকারের অনুমোদনক্রমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকম (ডট) এ স্থাপিত সাইবার থ্রেট ডিটেকশন এন্ড রেসপন্স (সিটিডিআর) নামক কারিগরী সিস্টেমের মাধ্যমে আপত্তিকর ওয়েবসাইট , ডোমেইন এবং ব্লগ বন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। ইতোমধ্যে সিটিডিআরের মাধ্যমে ২২,০০০ পর্নোগ্রাফি ও জুয়ারি সাইটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিটিআরসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ১৮,৮৩৬ টি লিংক অপসারণের অনুরোধ করে যার মধ্যে ৪,৮৮৮ লিংক অপসারণ করা হয় এবং ইউটিউবে ৪৩১ টি লিংক বন্ধ করার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ৬২টি লিংক বন্ধ করা হয়। এছাড়া, সিটিডিআর এর মাধ্যমে ১,০৬০টি ওয়েবসাইট এবং লিংক বন্ধ করা হয় ।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো: আফজাল হোসেন বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে অনেকেই অপব্যবহার করছে, আপত্তিকর কনটেন্ট, ভিডিওর ফলে শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে, দেশি-বিদেশী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে অনলাইনের ক্ষতিকর উপদান অপসারণে ডাক ও টেলিযোগযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসি কাজ করছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশই সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট মুছে ফেলার প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে পারে নি, যা করা সম্ভব, তা হলো দেশে পুরো ইউটিউব এবং ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া। বিটিআরসির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিটিআরসি কেবল ইউটিউব, ফেসবুকেকে কোনো কনটেন্ট সরাতে অনুরোধ করতে পারে। যদি সে কনটেন্ট তাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড পরিপন্থী হয়, তবে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা অপসারণ করে, নয়তো করেনা। আইনশৃংখলা বাহিনী বা সরকার কিংবা আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি ব্যবস্থা নেয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেট জগতে কোনোকিছু পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, অপরাধীরা বিভিন্ন সূত্র ব্যবহার করে অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিটিআরসি প্রতিনিয়ত অনলাইন মনিটরিং করছে, তবে এক্ষেত্রে আমাদের জনবলের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে কিভাবে সাইবার জগতকে অধিক নিরাপদ করা যায় সে বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার, আইনশৃংখলা বাহিনী এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিটিআরসি আভ্যন্তরিণ যেকোনো ওয়েবসাইট/ লিংক/ব্লগ বা সংশ্লিষ্ট অনলাইন কনটেন্ট বন্ধ/সাময়িক স্থগিত/অপারেশনাল কার্যক্রম সীমিতকরণ এর উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যেদের মধ্যে কমিশনার (স্পেকট্রাম) এ.কে.এম শহীদুজ্জামান, মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোঃ দেলোয়ার হোসাইন, মহাপরিচালক (স্পেকক্ট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ শহীদুল আলম, মহাপরিচালক (ইএন্ডও) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ এহসানুল কবির, মহাপরিচালক (লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং) আশীষ কুমার কুন্ডু , মহাপরিচালক (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) প্রকৌশলী মোঃ মেসবাহুজ্জামান সহ বিটিআরসির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।