দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক মোট ১১ কোটি, এর অধিকাংশই মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক। তবে এই চিত্র বদলাতে শুরু করেছে। স্বল্প খরচে গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে অন্যতম প্লেক্সাস ক্লাউড। কোম্পানিটি ‘স্বাধীন ওয়াইফাই’ ব্র্যান্ড নামে ইতোমধ্যে দেশের ২৫টি জেলার ২৪৯টি গ্রামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সেবা এবং সম্ভাবনা নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন প্লেক্সাস ক্লাউডের প্রধান নির্বাহী মোবারক হোসেন। সাক্ষাৎকার
নিয়েছেন হাসান জাকিরআপনারা ‘স্বাধীন ওয়াইফাই’-এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক এলাকায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দিচ্ছেন। গ্রামে ওয়াইফাই ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে মাথায় এলো?আমরা মূলত গ্রামে ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করছি ২০০৫ সাল থেকে। তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ছিল মাত্র দুই লাখ। বর্তমানে ইন্টারনেট গ্রাহকসংখ্যা ১১ কোটি। অধিকাংশ ইন্টারনেট গ্রাহকই প্রান্তিক এলাকার। আবার প্রান্তিক মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ অনেক বেশি। কেননা তাদের মোবাইল
অপারেটরের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। এতে দেখা যাচ্ছে, ব্রডব্যান্ডের তুলনায় গতি কম, খরচ অনেক বেশি। ব্রডব্যান্ড যদি বিশাল এই জনগোষ্ঠীর কাছে নেওয়া যায়, তবে দেশের চেহারাটাই বদলে দেওয়া সম্ভব। এজন্য সরকার ইনফো সরকার থ্রিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় দেশের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ফাইবার অপটিক কেবল পৌঁছে দিচ্ছে। এখন স্বল্প খরচে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামে ‘স্বাধীন ওয়াইফাই’-এর সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন। এতে করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্রডব্যান্ডের মানসম্মত সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।
স্বাধীন ওয়াইফাই এখন পর্যন্ত কতটি গ্রামে পৌঁছেছে?
বর্তমানে ‘স্বাধীন ওয়াইফাই’ দেশের সাতটি বিভাগে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে ২৫ জেলার ৩৫ উপজেলায় এবং ৫৩ ইউনিয়নের ২৪৯টি গ্রামের মানুষ ইতোমধ্যে নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। গ্রামাঞ্চল সাধারণত বাজারকেন্দ্রিক হয়। আমরা প্রথমে বাজারটিকে কাভার করি। তারপর পাড়াগুলো কাভার করি। এভাবে আমরা পর্যায়ক্রমে প্রতিটি গ্রামকে পুরোপুরি নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসছি।আপনারা বলছেন, ৯৯ টাকায় ৬০০ জিবি ইন্টারনেট দিচ্ছেন। কিন্তু ব্রডব্যান্ড তো জিবির হিসাব না।ঠিকই
ধরেছেন, ব্রডব্যান্ড গতির হিসাব করে, জিবির না। কিন্তু দেখেন, আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্রডব্যান্ডের আওতায় আনছি। আমাদের সম্ভাব্য গ্রাহক, এতদিন মোবাইল অপারেটরের ১, ২, ৫ কিংবা ১০ জিবি ডাটা কিনে সারা মাস ব্যবহার করত। তারা ইন্টারনেটকে এমবি কিংবা জিবি হিসেবে চেনে। তো আমরা গ্রাহকদের বলছি, মাত্র ৯৯ টাকায় মাসজুড়ে ৬০০ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং সেটি মোবাইল অপারেটরের চেয়ে অনেক ভালো গতি নিশ্চিত করবে। মোবাইল অপারেটরে সর্বোচ্চ
যেখানে এক/দুই জিবি পাবে, সেখানে ৬০০ জিবি! তো এজন্যই মূলত আমরা গ্রাহকদের জিবির কথা বলছি। এটা গ্রাহকদের বোঝানোর জন্য ব্যবসায়িক কৌশল। কিন্তু আমরা আসলে ব্রডব্যান্ডের গতিই বিক্রি করছি যেখানে সব সময় আনলিমিটেড ডাটার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়।-কেমন সাড়া পাচ্ছেন
দারুণ সাড়া পাচ্ছি। গ্রাহক যেমন গতিময় ইন্টারনেট পাচ্ছে, বাফারলেস ভিডিও দেখতে পারছে। তেমনি কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন কিংবা গ্রামভিত্তিক পার্টনার নিয়োগ দিচ্ছি, যারা স্বল্প বিনিয়োগ করে আমাদের হয়ে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় ৩০০ মানুষের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি এবং চলমান প্রক্রিয়া। আমরা যখনই নতুন এলাকা কাভার করছি তখনই আরও মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আমাদের বিশেষত্ব হচ্ছে, স্বাধীন ওয়াইফাইয়ের গ্রাহক হলে
আমাদের নেটওয়ার্ক আছে এমন যে কোনো জায়গা গেলে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। এটাও কিন্তু গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে।-আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী-দেখেন আমরা এখন যাদের ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছি, তাদের অধিকাংশই কিন্তু ছাত্র, কৃষক, ভ্যানচালক কিংবা সবজি বিক্রেতা। দেশের ৬০ ভাগেরও বেশি মানুষ এখন তরুণ, যার বড় অংশ বেকার। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যেক নাগরিককে ইন্টারনেটের আওতায় আনতে চায়। আমাদেরও লক্ষ্য সেটি।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষ যাতে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে, এজন্যও কাজ করছি আমরা। দক্ষ জনবল তৈরির অংশ হিসেবে গ্রামভিত্তিক ফ্রিল্যান্সার তৈরির জন্য কাজ করছি আমরা। এক্ষেত্রে সফল হতে পারলে সত্যিকার অর্থে উদাহরণযোগ্য কাজ হবে এটি।