এটিঅ্যান্ডটি, ভেরাইজন থেকে শুরু করে টি-মোবাইল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সেলফোন কোম্পানিগুলো তাদের থ্রিজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করতে যাচ্ছে। ২০২২ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কাজ করবে না তাদের থ্রিজি ফোন। আগামী বছর থেকে পুরনো থ্রিজি ফোন থেকে টেক্সট মেসেজ পাঠানো, কল করা এমনকি ৯১১ নম্বরেও জরুরি কল দেয়া যাবে না। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
পুরনো ফোন বাতিল হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে পারেন বয়স্ক আমেরিকানরা, যারা একই ফোন দীর্ঘ সময় ব্যবহার করে থাকেন। এমনই একজন হচ্ছে কামি গ্রিফিথস, যিনি ২০১৬ সাল থেকে স্যামসাং গ্যালাক্সির একটি থ্রিজি ফোন ব্যবহার করে আসছেন। কমিউনিটি টেক নেটওয়ার্ক নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক তিনি। কয়েকশ ডলার ব্যয় করে তিনি হয়তো নতুন ফাইভজি ফোন ক্রয় করতে পারবেন কিন্তু তিনি তার গ্রাহকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। সানফ্রান্সিসকোর নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ডিজিটাল লিটারেসির বিকাশে কাজ করছে কমিউনিটি টেক নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটির বয়স্ক কিংবা নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর পক্ষে নতুন ফোন কেনা এবং ফাইভজি ফোন ব্যবহার করা কঠিন ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গ্রিফিথস।
তিনি বলেন, আমাদের সদস্যদের জন্য ফোন পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। থ্রিজি ফোন বাতিলের সিদ্ধান্তে তারা খুশি হওয়ার কথা নয়। বয়স্ক জনগোষ্ঠীর পক্ষে নতুন ফোনে অভ্যস্ত হওয়া কষ্টকর ঠেকে। কোনো ফোন যদি ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে তারা সেটা পরিবর্তনে আগ্রহী নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই দশক ধরে সচল থ্রিজি প্রযুক্তি। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থ্রিজি সেবা চালু করেছিল ভেরাইজন। ২০১০ সালে তারা ফোরজি চালু করে। ২০১৯ সালের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ফাইভজি নেটওয়ার্কে প্রবেশ শুরু করে। ফাইভজি নেটওয়ার্কের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং পুরনো নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় অর্থ ব্যয় কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে তারা। এ ধারাবাহিকতায় থ্রিজি সেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকেই মোবাইল নেটওয়ার্কগুলো তাদের থ্রিজি সেবা বন্ধ করতে শুরু করবে। বেশির ভাগ কোম্পানিই তাদের দিন-তারিখ ঠিক করে ফেলেছে। যেমন স্প্রিন্ট তাদের থ্রিজি বন্ধ করতে যাচ্ছে ১ জানুয়ারি ২০২২, এটিঅ্যান্ডটি ২২ ফেব্রুয়ারি, স্প্রিন্ট তাদের এলটিই বন্ধ করছে ৩০ জুন এবং ভেরাইজন তাদের থ্রিজি বন্ধ করছে ৩১ ডিসেম্বর। টি-মোবাইল অবশ্য তাদের ২জি ও ৩জি সেবা বন্ধের দিন-তারিখ নিশ্চিত করেনি।
আইফোন ৬-এর পুরনো সব সেটে ফোন কল কিংবা ডাটা ব্যবহার করা যাবে না। স্যামসাং গ্যালাক্সি এস৪ কিংবা তার পুরনো ফোনগুলো থ্রিজি ফোন। এর পরবর্তী গ্যালাক্সি ফোনগুলোতে কাজ চালাতে আপডেট দিতে হবে। গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে মোবাইল কোম্পানিগুলো বলছে, থ্রিজি বন্ধের সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জিএসএমএ ইন্টেলিজেন্সের বরাতে জানা গেছে, ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৪ শতাংশ গ্রাহকের থ্রিজি ফোন রয়েছে। অধিকাংশ গ্রাহকের হাতে ফোরজি ও ফাইভজি ফোন চলে এসেছে।
থ্রিজি বন্ধ হলে লাখো ডিভাইস অপাঙেক্তয় হয়ে পড়বে। তবে ওই ফোনগুলোর জন্যও কার্যকরী কিছু পরামর্শ দিচ্ছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। ওয়াই-ফাই কানেক্টিভিটি রয়েছে এমন থ্রিজি ফোনে হয়তো ফোন কল বা মেসেজ পাঠানো যাবে না কিন্তু তা অনেকগুলো কাজে আসতে পারে। এটাকে পোর্টেবল রেডিও, গেম খেলার যন্ত্র; নিদেনপক্ষে অ্যালার্ম ঘড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি থ্রিজি কিন্ডলেতে বই পড়াও চালিয়ে যাওয়া যাবে।