আগামীকাল (২৫ এপ্রিল) থেকে নির্দিষ্ট গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে ই-সিম নিতে পারবেন গ্রাহকরা। এর আগে মার্চের শুরুতে ই-সিম নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছিলো গ্রামীণফোন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি প্রযুক্তিগতভাবে প্রস্তুত থাকলেও অনিবার্য কারণবশত পিছিয়ে যায় ই-সিমের উন্মোচন। বিশ্বজুড়েই যুগান্তকারী ডিজিটাল রূপান্তরসহ পরিবেশগত সুবিধা প্রদানে প্রভাবক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে ই-সিম (এমবেডেড সিম)। অত্যাধুনিক কানেক্টিভিটির ভবিষ্যতমুখী বিভিন্ন ফিচারসহ, ই-সিম ডিজিটাল যুগে নানা সম্ভাবনা উন্মোচন কাজ করবে।
‘ফোরজি ই-সিম: পরিবেশ-বান্ধব ডিজিটাল সিমের এখনই সময়’ স্লোগানে গ্রামীণফোন গ্রাহকরা নিজেদের ক্ষমতায়নে ই-সিম সমর্থন করে এমন ডিভাইসে প্লাস্টিক সিম কার্ড ছাড়াই কানেক্টিভিটির পূর্ণ সুবিধা উপভোগ করবেন। গ্রামীণফোন বিশ্বাস করে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও উদ্ভাবনকে অবশ্যই জলবায়ুর সংক্রান্ত বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে পৃথিবীকে রক্ষা করতে প্রতিটি পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশবান্ধব বিষয়গুলোর ওপর সবসময়ই গুরুত্বারোপ করে গ্রামীণফোন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ই-সিমের ব্যবহার বেড়ে হবে ৩.৪ বিলিয়ন। এ কার্যক্রমটি দায়িত্বশীলভাবে পরিচালনার মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতের অগ্রণী হিসেবে বাংলাদেশের নির্ধারণ করা ইএসজি লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে এ পথচালায় যুক্ত হযেছে গ্রামীণফোন।
দেশের বাজারে ই-সিমের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ করে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, “এ ধরনের উন্নত ও পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পেরে আমরা আনন্দিত ও অনুপ্রাণিত। ই-সিম উন্মোচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পরিবেশ-বান্ধব কানেক্টিভিটির নতুন যুগের সূচনায় আমাদের সহায়তা করার জন্য আমি বিটিআরসি, এনবিআর, গ্রামীণফোনে আমার সহকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের ধন্যবাদ জানাই। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে অগ্রণী হিসেবে, এ যাত্রায় যুক্ত হতে আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই। এ বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই যে জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের সুরক্ষায় আমাদের সবাইকে অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। গ্রামীণফোনের রজত জয়ন্তী উপলক্ষে এবং আমাদের গ্রাহকদের আরও অর্থবহ ও ডিজিটালভাবে সেবাদানে; পাশাপাশি, প্রকৃতির সুরক্ষায় সবার সাথে একাত্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ই-সিম আমাদের পরিবেশ-বান্ধব বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে অন্যতম।”
গ্রামীণফোনের নতুন ই-সিম সংযোগ পেতে হলে ক্রেতাদের ই-সিম সমর্থন করে এমন ডিভাইস নিয়ে গ্রামীণফোনের এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) এবং নির্ধারিত গ্রামীণফোন সেন্টারে গিয়ে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করে ই-সিমের জন্য অনুরোধ করতে হবে। সিম কেনার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, গ্রামীণফোনের অনলাইন শপের মাধ্যমেও ই-সিমের জন্য অনুরোধ করা যাবে। আগ্রহী ক্রেতারা জিপি হা্উস এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার, জিপিসি লাউঞ্জ গুলশান, জিপিসি লাউঞ্জ জিইসি-চট্টগ্রাম, জিপি অনলাইন শপ, মতিঝিল জিপিসি, ফার্মগেট জিপিসি, বসুন্ধরা সিটি জিপিসি, ঢাকা বিমানবন্দর জিপিসি, উত্তরা জসিমউদ্দীন রোড জিপিসি, সীমান্ত স্কয়ার জিপিসি, ধানমন্ডি ও সিলেট করিমুল্লাহ মার্কেট জিপিসি থেকে ই-সিম সংযোগ নিতে পারবেন। ই-সিমের ক্ষেত্রে নতুন সংযোগের মূল্য ২০০ টাকা এবং প্লাস্টিক সিম থেকে ই-সিম কিংবা ই-সিম থেকে ই-সিমে রিপ্লেসমেন্ট ফি ৯৯ টাকা।
ই-সিম সমর্থন করে এমন ডিভাইসে থাকা ক্যামেরা দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করে ই-সিম সক্রিয় করতে ইন্টারনেট সংযোগ (মোবাইল ডাটা অথবা ওয়াইফাই) চালু করতে হবে। এর ফলে, প্রচলিত সিম কার্ডে যে ঝামেলা রয়েছে তা দূর হবে।
বহু নেটওয়ার্ক এবং নম্বর একটি ই-সিমে সংযুক্ত করা যাবে; তবে, এটি নির্ভর করবে হ্যান্ডসেটের ওপর। এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়েই নিরবচ্ছিন্ন কানেক্টিভিটি সেবা নিশিচত হবে। গ্রাহকরা ই-সিমে একাধিক নম্বর ব্যবহার করতে পারবেন, যা ভ্রমণকারীদের জন্য আরো স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে। সল্যুশনটি যেহেতু ডিভাইসের সাথে এমবেড করা থাকবে, তাই এক্ষেত্রে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে কিছু করার প্রয়োজন হবে না। ব্যবহারকারীদের তথ্য ডিজিটাল ফরম্যাটে স্টোর করা থাকবে বলে ই-সিম উন্নত নিরাপত্তা প্রদান করেবে। অপ্টিমাইজেশনের যুগে, ই-সিম প্রচলিত সিম কার্ড ও ট্রে’র ধারণাকে অকার্যকর করে ফেলবে। ফলে, এর মাধ্যমে অবশিষ্ট জায়গায় ফোনের ব্যাটারির আকার বৃদ্ধি করা যাবে কিংবা হ্যান্ডসেটে আরো ফিচার যুক্ত করা যাবে। ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত থাকবে বলে সিম কার্ড হারিয়ে যাওয়ার কোনো ঝুঁকিই থাকবে না; একইসঙ্গে সিম পিনের ঝামেলা থেকেও গ্রাহকরা রক্ষা পাবেন।
জিএসএমই, ইটিএসআই, গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম এবং সিমঅ্যালায়েন্স দ্বারা স্বীকৃত ই-সিম ভবিষ্যতের কানেক্টিভিটি হয়ে দাঁড়াবে এবং এটি টেলিকম খাতের ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অ্যাপল, গুগল, হুয়াওয়ে ও উইন্ডোজ তাদের ইকোসিস্টেমে ই-সিম অন্তর্ভুক্ত করছে এবং বিশ্বের লক্ষাধিক মানুষ ইতোমধ্যে এর সুবিধা গ্রহণ করছেন।