পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক দর পতনে ব্যাপকভাবে কমে গেছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর মাঝে টেলিকমিউনিকেশন খাতে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোন লিমিটেডের শেয়ারের দাম কমে ১ বছর ১১ মাসের (প্রায় ২ বছর) মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) ডিএসইতে গ্রামীণফোনের শেয়ার সর্বোচ্চ ২৮৮ টাকা ৫০ পয়সা, সর্বনিম্ন ২৮৬ টাকা দরে কেনাবেচা হয়। শেয়ারটির ক্লোজিং মূল্য ছিল ২৮৬ টাকা।
আজকের ক্লোজিং মূল্য গত এক বছর ১১ মাসের মাঝে গ্রামীণফোনের শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য।
এর আগে ২০২০ সালের ২০ আগস্ট ডিএসইতে শেয়ারটির দাম ছিল ২৮৬ টাকা ১০পয়সা। এর ঠিক পাঁচ মাসের মাথায় ২০২১ সালের জানুয়ারির ২০ তারিখে শেয়ারটির দর প্রায় ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৩৮৩ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরের ১২ তারিখে গ্রামীণফোনের শেয়ারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে ৩৮৭ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয় গ্রামীণফোনের শেয়ার। এর পর থেকে দাম কমতে থাকে কোম্পানিটির শেয়ারের। চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি লেনদেন হয়েছে সর্বোচ্চ ৩৫৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
কোম্পানিটির শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ২৮৬ টাকা। যা গ্রামীণফোনের এখনকার পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্যের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ কম এবং চলতি বছরের সর্বোচ্চ মূল্যের তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ কম।
২০০৯ সালে বাজারে আসা টেলিকম খাতের কোম্পানি গ্রামীণফোনই ছিল সে সময়কার পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় মূলধনী কোম্পানি। ফলে গ্রামীণফোন তালিকাভুক্ত হওয়ার পর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সূচকের যেমন বড় উল্লম্ফন ঘটেছিল, তেমনি বাজার মূলধনেও হয়েছিল রেকর্ড।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে গ্রামীণফোনের গড় লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল ২২৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৫ বছর ধরে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে গ্রামীণফোন বিনিয়োগকারীদের গড়ে প্রায় ২৩ টাকা করে লভ্যাংশ দিয়ে গেছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পছন্দের শেয়ারগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোন বা জিপি অন্যতম।
কোম্পানিটির ব্যবসায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির কারণে দেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছেও যথেষ্ট প্রিয় ছিল এর শেয়ার। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি, বাংলাদেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ক্রমে বাড়তে থাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে থাকায় বিদেশী বিনিয়োকারীরা এখান থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে শুরু করলে গ্রামীণফোনসহ বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারের বিক্রির চাপ বেড়ে যায়। আর এ কারণেই শেয়ারটির এতটা দর পতন হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বরে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় জিপির। তার আগে কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে প্রায় ৬ কোটি ৫৭ লাখ শেয়ার বিক্রি করে ৪৮৬ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে। আর প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছিল আরও ৪৮৬ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শেয়ার ছেড়ে কোম্পানিটি ৯৭২ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছিল।