বৈশ্বিক বাজারে হার্ডওয়্যার ব্যবসা নিয়ে খারাপ সময় পার করছে অ্যাপল। টানা কয়েক প্রান্তিক ধরে আইফোনের বিক্রি কমছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং রাজস্ব প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকতে হার্ডওয়্যারে নয়, বরং অ্যাপ স্টোর, মিউজিক ও আইটিউনের মতো সেবায় গুরুত্ব দিচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। এর পরও ডাউনলোড কমেছে অ্যাপ স্টোরে। বলা হচ্ছে, ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর এবারই প্রথম অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড কমল। মার্কিন বহুজাতিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি মরগান স্ট্যানলির গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। খবর বিজনেস ইনসাইডার।
বিশ্বব্যাপী কত সংখ্যক ডিভাইস বিক্রি হচ্ছে, তার তথ্য দেয়া বন্ধ করেছে অ্যাপল। রাজস্ব আয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হার্ডওয়্যারের পরিবর্তে সফটওয়্যার ও সংশ্লিষ্ট সেবায় গুরুত্ব আরোপের কথা তারা এরই মধ্যে জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ আর্থিক খতিয়ানেও দেখা যায় রাজস্বের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আসছে অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড, মিউজিক ও আইটিউনস সেবা থেকে। আইফোন বিক্রি কমলেও সেবা বিভাগের রাজস্ব বাড়ায় খুব বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। কিন্তু এখন অ্যাপ স্টোরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হ্রাস অ্যাপলের জন্য বড় ক্ষতির কারণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাপল সম্পর্কিত মরগান স্ট্যানলির সংগৃহীত ডাটা পর্যালোচনা করে বিশ্লেষক কেটি হুবার্টি জানান, চার বছরের মধ্যে এবারই প্রথম অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড কমেছে। গত বছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড কমেছে ৫ শতাংশ। অন্যদিকে অ্যাপলের অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আইফোন বিক্রি সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ কমার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আইফোন বিক্রি কমে যাওয়াই অ্যাপ স্টোরের ডাউনলোড কমার প্রধান কারণ। অর্থাৎ বিক্রি কমে যাওয়ায় নতুন আইফোন কিংবা অন্য অ্যাপল ডিভাইসের জন্য অ্যাপ ডাউনলোডও কমে গেছে।
আইফোন অ্যাপলের একটি আইকনিক ডিভাইস। ২০১৭ সালে প্রথম প্রজন্মের আইফোন উন্মোচনের মধ্য দিয়ে অ্যাপলের উত্থান। মোবাইল ডিভাইসের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছিল আইফোন। সেই থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি অ্যাপলকে। এখনো প্রতিষ্ঠানটির রাজস্বের একটি বড় অংশ আসছে আইফোন বিক্রি থেকে। আইফোন বিক্রি টানা কমতে থাকায় সেবা ব্যবসায় গুরুত্ব দিতে শুরু করে অ্যাপল। এর সুফলও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু টানা আইফোন বিক্রি কমার মধ্যেই অ্যাপ স্টোরের ডাউনলোড কমে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির জন্য নেতিবাচক মনে করা হচ্ছে। কারণ ডিভাইস বিক্রি কমলেও সেবা বিভাগের আয় দিয়ে রাজস্বে ভারসাম্য রক্ষার কথা চিন্তা করেছিল অ্যাপল।
গত নভেম্বরে অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) টিম কুক বিনিয়োগকারীদের বলেছিলেন, বিশ্বব্যাপী কত ইউনিট আইফোন বিক্রি হলো, তার তথ্য প্রকাশ বন্ধ করবে অ্যাপল। এর বদলে অ্যাপলের সার্বিক রাজস্ব আয়ের দিকে নজর রাখতে বলেছিলেন তিনি। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, আইফোন বিক্রি কমে যাওয়া অ্যাপলের রাজস্বে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না। কারণ আইফোন বিক্রি কমলেও অ্যাপলের সেবা ব্যবসাগুলো থেকে রাজস্ব বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আইফোন বিক্রি কমলেও পুরনো ক্রেতাদের কাছে ভিডিও, গান বিক্রি, আইটিউনস ও অ্যাপ ডাউনলোডের মাধ্যমে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল অ্যাপল। আইফোন বিক্রি বাড়াতে স্মার্টফোনের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীনে কয়েক ধাপে আইফোনের দাম কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া দেশটিতে কিস্তিতেও আইফোন বিক্রির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার পরও চীনে আইফোন বিক্রি আশানুরূপ বাড়েনি। চীনের দুর্বল অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে বাজারটিতে আইফোনের দখল ১ শতাংশের নিচে নেমে গেছে।