৫জি চালুর পর এবার ৬জি চালু হচ্ছে ভারতে। শিগগিরই দেশটিতে যষ্ঠ প্রজন্মের এই টেলিকম নেটওয়ার্ক চালু হবে। গতকাল ১৫ আগস্ট বুধবার ভারতের ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অচিরেই ৬জি চালুর আশ্বাস দেন।
এই সময় মোদি বলেন, ৬জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের বিষয়ে সরকার একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে ভারত সবথেকে দ্রুত এগোচ্ছে। ভারতের ৭০০টি জেলায় পৌঁছে গিয়েছে ৫জি পরিকাঠামো।
৬জি কী?
৬জি হল সিক্সথ জেনারেশন বা ষষ্ঠ প্রজন্মের সেলুলার প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে, সেকেন্ডের ভগ্নাংশে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে ৪জি এবং ৫জি নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে ভারতেও ৫জি চালু আছে। বলাই বাহুল্য ৬জি আরও উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ডের নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক এখনও তৈরি না হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুহূর্তের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান করা যাবে। ২জি নেটওয়ার্কে আমরা শুধু টেক্সট মেসেজ পাঠাতে পারতাম। ৪জি আসার পর ইন্টারনেটের গতি বাড়ায় একটি সম্পূর্ণ মোবাইল অ্যাপ সিস্টেম চালু করা গিয়েছে। ৬জি অগণিত মেশিন এবং গ্যাজেটকে স্থলে এবং আকাশে একসঙ্গে সংযুক্ত করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬জি প্রযুক্তি এলে, ভৌত জগত এবং ডিজিটাল জগতের মধ্যের পার্থক্য প্রায় ঘুঁচে যাবে।
৫জির থেকে কোথায় আলাদা ৬জি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ৬জি বর্তমানের ৫জি প্রযুক্তিকে সব দিক থেকে টেক্কা দেবে। আশা করা হচ্ছে, ৬জি এক মাইক্রোসেকেন্ডে এক টেরাবাইট বা ১০০০ গিগাবাইট ডেটা পাঠাতে পারবে। ৫জি এক মিলিসেকেন্ড অর্থাৎ, ১০০০ মাইক্রোসেকেন্ডে ২০ গিগাবাইট পর্যন্ত তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এটি অবশ্য প্রাথমিকভাবে মেশিন-টু-মেশিন যোগাযোগের ক্ষেত্রেই কার্যকর হবে। এটি এতই দ্রুতগামী, যে আমাদের মস্তিষ্কের পক্ষে এটি ধরা প্রায় অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানিয়েছেন, ৬জি প্রযুক্তির মাধ্যমে দূর থেকেই কারখানাগুলি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, গাড়ি চালানো যাবে, একে অপরের সঙ্গে কথা বলা যাবে, মানুষের অনুভূতি বুঝতে পারবে যন্ত্র।
কবে আসবে ৬জি?
এখনও পর্যন্ত, ৬জি কবে আসবে, তার কোনও নির্দিষ্ট দিন জানা যায়নি। শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের সর্বত্রই এই প্রযুক্তি এখনও বিজ্ঞানীদের কল্পনাতেই রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন, ২০৩০ সালের মধ্যেই এই প্রযুক্তি বাস্তবে দেখা যেতে পারে। গবেষকরা জানিয়েছেন, সাধারণত পরবর্তী প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কগুলি অলিম্পিককে কেন্দ্র করে চালু করা হয়। ২০৩২ সালের অলিম্পিক হবে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে। সেই সময়ই ৬জি চালু হতে পারে। কারা ৬জি প্রযুক্তি আগে আনতে পারে, তার জন্য দৌড় কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। আমেরিকা, দক্ষিণ কোরিয়া, চিন, জাপানের মতো দেশগুলোতে গবেষণা চলছে। ভারতও ৬জি প্রযুক্তি বিকাশের লক্ষ্যে পদক্ষেপ করছে। এখনও পর্যন্ত ঠিক করা হয়েছে, ভারতে দুটি পর্যায়ে ৬জি চালু করা হবে। প্রথম পর্যায় ২০২৩ থেকে ২০২৫-এর মধ্যে। এই সময় এই প্রযুক্তির বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে চর্চা করা হবে। এরপর, ২০২৫ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে সেই ধারণাগুলি পরীক্ষা করা হবে। তারপর, বাণিজ্যিক ভাবে চালু করা হবে ৬জি।