দেশের ১১ কোটি ৮৮ লাখ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৬৯ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য তিন-সাত দিনের ছোট প্যাকেজ নেন। এই জনপ্রিয় ডেটা প্যাক বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। একই সাথে ১৫ দিন মেয়াদের প্যাকেজও বন্ধ করাসহ প্যাকেজের ধরন ও প্রমোশনাল এসএমএসের সংখ্যা কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিটিআরসির মোবাইল ইন্টারনেটের প্যাকেজ এর ক্ষেত্রে নতুন যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তা গ্রাহক বান্ধব নয়, সাধারণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করবে এবং সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন বাঁধাগ্রস্থ হবে বলে মনে করেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় স্বার্থসংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটি।
বিটিআরসি কর্তৃক মোবাইল ইন্টারনেট এর নতুন প্যাকেজ ঘোষনার প্রতিবাদে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ গণ মাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, সহ-সভাপতি সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মানুষ তাদের প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের ডেটা প্যাক কিনেন। এদের মধ্যে বড় অংশই কিনেন স্বল্প মেয়াদের প্যাকেজ এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ছোট ছোট ডেটা প্যাকের চাহিদা বেশি। দেশে ও প্রবাসে আত্মীয় পরিজনের সাথে যোগাযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা নিতে তিন দিন মেয়াদের ডেটা প্যাকেজ অধিকাংশ গ্রাহকের পছন্দ। প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ, শ্রমজীবী, বেকার, শিক্ষার্থী এমনকি নিম্ন আয়ের মানুষজন মোবাইল ইন্টারনেটের বড় গ্রাহক। এ সকল গ্রাহকদের চাহিদাও ভিন্ন ভিন্ন। দেশের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ গ্রাহক ছোট ছোট প্যাকেজগুলি সাশ্রয়ী ও কম টাকায় সামর্থ অনুযায়ী গ্রাহকরা কিনতে পারেন।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিটিআরসি সীমিত ও প্রান্তিক মানুষের সামর্থের কথা চিন্তা না করে তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ করে দিয়ে কার স্বার্থ রক্ষা করছে? প্রান্তিক ও সীমিত আয়ের মানুষের ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করতে কী এই আয়োজন কিনা? তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। কারণ সীমিত আয়ের এমনকি শিক্ষার্থী বেকার তরুণ-তরুনী ও শ্রমজীবীদের পক্ষে ২০০ বা ৩০০ টাকা দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
নেতৃবন্দ আরও বলেন, সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান মন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছেন। আগামীতে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেখানে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে সরকার ডিজিটাল সেবার আওতায় আনতে বন্ধ পরিকর। বিটিআরসির এই সিদ্ধান্ত সরকারের পরিকল্পনার শুধু প্রতিবন্ধকতা তৈরী করবে না, এটা উল্টো পথে হাঁটার ইঙ্গিত বহন করছে। আর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশের বিপুল পরিমান লোক সরকারের ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হবে। বড় ডেটা প্যাকেজ গুলি রেখে ছোট প্যাকেজ গুলি বাতিল করা হলে বড় বড় করপোরেটগুলো সুবিধা হবে একই সাথে মোবাইল অপারেটররা লাভবান হতে পারেন। কিন্তু রাস্ট্রের সকল নাগরিকের কোন অধিকার হরণ বা অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা জনগনের করের টাকায় বেতন-ভাতা ভোগকারী কোন রাস্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমুচীন নয় বলে মন্তব্য করে অবিলম্বে ব্রডব্যান্ডের মতো এক দেশ এক রেট, মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজের মূল্যের সামঞ্জস্যতা আনা, অব্যবহৃত ডাটা ফেরত পাওয়া ও যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সব শ্রেণীর গ্রাহকের মতামত নেবার দাবি জানান।