তুমুল জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও শুধু ‘গ্রাহক স্বার্থ’ বিবেচনা করে বাদ দেওয়া হয়েছে তিন দিন মেয়াদের ডাটা (ইন্টারনেট) প্যাকেজ। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। তখন ডাটা প্যাকেজ হবে ৭ ও ৩০ দিনের। আরেকটি হবে আনলিমিটেড প্যাকেজ।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি বলছে, গ্রাহক অসন্তোষ দূর করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা পাবে।
বিটিআরসিরই এক উপস্থাপনায় দেখা গেছে, তিন মাসে মোবাইল অপারেটরগুলোর তিন দিনের ডাটা প্যাকেজে হিটের সংখ্যা ছিল ৩০ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ২১৩টি, যা মোট ডাটা প্যাকেজে হিটের মধ্যে ৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। তারপরও বিটিআরসি এটাকে গ্রাহক স্বার্থ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা ব্যান্ডউইথ কিনে তা ডাটা হিসেবে বিক্রি করে। ফলে তারা কস্ট (খরচ বা ব্যয়) কত, তা বের করতে পারেনি। তারা (অপারেটররা) আমাদের যে অ্যানালাইসিস দিয়েছে, তা একেকটা একেক রকম। ফলে আমরা তা গ্রহণ করিনি। এ কারণে মোবাইল ডাটার দাম আমরা মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ছেড়ে দিয়েছি। প্রতিযোগিতা করে বিক্রি করো।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইল অপারেটররা ডাটার দাম ও মেয়াদ নিয়ে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করে। প্রলভোনের মুলা ঝুলিয়ে রাখে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। এ কারণে তারা যত দিন ডাটার কস্ট বের করে দিতে পারছে না, তত দিন মোবাইল ডাটার দাম এভাবেই নির্ধারিত হবে।’
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেওয়া হবে না। ওই অবস্থান থেকে সরে আসা হয়েছে। তিন দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ বাদ দেওয়ায় নানা সমস্যা হচ্ছে। দাম বেঁধে দিলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। নির্বাচনের আগে আর কোনও ধরনের ঝুঁকিতে যেতে চায় না সরকার।
জানা গেছে, মোবাইল ইন্টারনেটের দাম আপাতত বেঁধে দেওয়া হবে না। অপারেটরগুলো কস্ট মডেল দেওয়ার পর সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে। অপারেটরগুলো প্রতিযোগিতা করে ডাটা বিক্রি করুক। ডাটার দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে এখন কোনও ধরনের নির্দেশনা দিতে চায় না সরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটবের মহাসচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ জুলফিকার বলেন, একেক অপারেটরের ডাটা উৎপাদন খরচ একেক রকম। ফলে কস্ট অ্যানালাইসিসও একেক রকম হবে। তাদের মুনাফাও করতে হবে। ফলে আপাতত বিষয়টি নিয়ে কিছু হচ্ছে না বলে আমরা জানতে পেরেছি।
তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনও বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে বোঝাচ্ছি। উপযোগিতার কথা বলছি। দেখা যাক ভবিষ্যতে কী হয়।
বিটিআরসির এক উপস্থাপনায় দেখা গেছে, (তিন মাসের সামারি) মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোয় তিন দিনের ডাটা প্যাকেজে হিট ৩০ কোটি ৪৬ লাখ ১০ হাজার ২১৩ (৬৯ দশমিক ২৩ শতাংশ), সাত দিনের ডাটা প্যাকেজে হিট ৭ কোটি ৪১ লাখ ১২৯ (১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ), ১৫ দিনের ১ কোটি ৬৮ লাখ ৯ হাজার ৭৭১ (৩ দশমিক ৮২ শতাংশ), ৩০ দিনের ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৭১ হাজার ১৮২ (১০ দশমিক ১১ শতাংশ) বার।
এর মধ্যে শুধু ৭ ও ৩০ দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ থাকছে। আর থাকছে আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ। বিপুল জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, গ্রাহকরা আগে তিন দিনের মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ নতুন নিয়মে সাত দিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারবেন। যদিও তিন দিনের কোনও প্যাকেজই আর থাকবে না ১৫ অক্টোবর থেকে।
তিন দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ বাদ দেওয়ার কারণ হিসেবে বিটিআরসির ব্যাখ্যা হলো, যদিও বেশির ভাগ (৬৯ দশমিক ২৩) গ্রাহক তিন দিনের মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করে কিন্তু দেখা গেছে, প্যাকেজ কেন্দ্রিক প্রতারণা, স্বল্প সময়ের মধ্যে অল্প খরচে বেশি পরিমাণ ডাটা অফারের মাধ্যমে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে। পরবর্তী সময়ে গ্রাহক তিন দিনের মধ্য ওই বেশি পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করতে না পারার কারণে তার নিজের পয়সায় কেনা অব্যবহৃত ডাটা হারিয়ে ফেলে। এতে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকরা তিন দিনের মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ নতুন নিয়মে সাত দিন ব্যবহার করতে পারবেন, এমন নিয়ম মানতে পারছেন না মোবাইল অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহীরা। এ বিষয়ে কথা বলতে অপারেটরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিটিআরসিতে বৈঠকে বসেন।
অপারেটরগুলোর বক্তব্য, তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ ব্যবহারকারীর মধ্যে বেশি হলো শিক্ষার্থী, নিম্ন আয় ও প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ। এই প্যাকেজ না থাকলে তাদের মধ্যে একধরনের বৈষম্য তৈরি হবে। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, গ্রাম ও শহরের মানুষের আয় এক নয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, অপারেটরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের অন্যান্য ইস্যু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ নিয়েও বিটিআরসির চেয়ারম্যান বক্তব্য শুনেছেন।
সূত্র আরও জানায়, চেয়ারম্যান শীর্ষ নির্বাহীদের জানিয়েছেন, আপনারা ১০ থেকে ১৫ দিন বা ২০ দিন তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ রেখে (চালু না রেখে) দেখেন কী প্রভাব পড়ে। প্রভাবের কথা বিটিআরসিতে জানান। তখন দেখা যাবে সেটা নিয়ে কী করা যায়।
নতুন নির্দেশনায় যা বলা আছে
নতুন নির্দেশনা আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইন্টারনেটের প্যাকেজ সংখ্যা হবে ৪০টি, যা আগে ছিল ৮৫টি। এ ছাড়া প্যাকেজের সময়সীমা হবে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড। প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিডেট ডাটা প্যাকেজ অফার করবে— ২৫, ৫০ ও ৭৫ জিবি করে।
এ ছাড়া মোবাইল অপারেটরগুলোর নিজস্ব (গ্রামীণফোনের মাইজিপি, রবির মাই রবি ও বাংলালিংকের মাইবিএল অ্যাপ) অ্যাপের মাধ্যমে ফ্লেক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজ ডিজাইন করা যাবে, যা মূল প্যাকেজ সংখ্যায় (৮৫টিতে) অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, বোনাসসহ অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে।