মোবাইল ফোন গ্রাহকদের জন্য নতুন ডাটা প্যাকেজ চালু করেছে অপারেটর কোম্পানিগুলো। নতুন নিয়মে ৭ দিন ও ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড মেয়াদের ৪০টি ডাটা প্যাকেজ পাওয়া যাচ্ছে। ৩ দিন ও ১৫ দিন মেয়াদের প্যাকেজ রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে বন্ধ করে দিয়েছে অপারেটররা।
গ্রাহকরা বলছেন, নতুন নিয়মে ৩০ দিন ও আনলিমিটেড মেয়াদের ডাটা প্যাকেজের দাম আগের মতোই রয়েছে। তবে ৭ দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ কিনে ইন্টারনেট ব্যবহারে ১০-১৫ টাকা খরচ বেড়েছে।
অন্যদিকে অপারেটররা বলছেন, ৩ দিন মেয়াদের প্যাকেজের চাহিদা অনেক। এটা বাদ দেওয়ায় তারা বিপুল সংখ্যক গ্রাহক হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। বিটিআরসিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ৩ ও ১৫ দিনের মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসির নির্দেশনা ছিল- ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড—এই তিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ রাখতে হবে। একইসঙ্গে ডাটা প্যাকেজ সংখ্যা ৯৫ থেকে কমিয়ে ৪০টি করতে হবে। নির্দেশনা মেনে রোববার (১৫ অক্টোবর) থেকে দেশের সব মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ৩ ও ১৫ দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ সরিয়ে ফেলেছে।
মাইজিপি অ্যাপে দেখা গেছে, গ্রামীণফোনে বর্তমানে গ্রাহকদের জন্য ২৬টি প্যাকেজ দেখাচ্ছে। সেখানে ২ ও ১৫ দিন মেয়াদের কোনো প্যাকেজ নেই। ৭ দিন মেয়াদে সবচেয়ে বেশি দামের প্যাকেজ ২৫ জিবি, যার দাম ২৪৯ টাকা। ৩০ দিন মেয়াদে সবচেয়ে বড় প্যাকেজ ৬০ জিবি। এ প্যাকেজের দাম ৬৯৮ টাকা। আর আনলিমিটেড মেয়াদে ৭৫ জিবির প্যাকেজের দাম ১ হাজার ৭৪৯ টাকা।
শিহাবুল ইসলাম নামে গ্রামীণফোনের একজন গ্রাহক নতুন ডাটা প্যাকেজের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আগে অফারে ১৭ টাকায় আমি ১৫ দিন মেয়াদে ২ জিবি প্যাকেজ কিনতাম। বাসা ও অফিসে ওয়াইফাই থাকায় শুধু বাইরে থাকা সময়ে আমি মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম। মাসে দুইবারে ৩৪ টাকা ৪ জিবি ইন্টারনেট নিলেই আমার হয়ে যেতো। এ প্যাকেজ সরিয়ে নেওয়ায় এখন আমার লোকসান। বেশি টাকা দিয়ে বেশি মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ কেনার প্রয়োজন তো আমার নেই।
নতুন নিয়মে সুবিধার কথাও বলছেন অনেকে। ইকবাল হোসাইন নামে একজন গ্রাহক বলেন, তিনদিনের প্যাকেজটা বাজে ছিল। দামের তুলনায় ইন্টারনেট ভলিউম বেশি দেখে লোভে পড়ে কেনা হতো। কিন্তু এত ভলিউম শেষ করার সময়ই মিলতো না। দেখা যেতো- অর্ধেকের বেশি ইন্টারনেট ভলিউম থাকতেই মেয়াদ শেষ।
তিনি বলেন, তখন ওরা (অপারেটর কোম্পানি) মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়ার নোটিফিকেশন দেয়। মেয়াদ বাড়াতে হলে আবার ওই একই প্যাকেজ কিনতে হবে। তিনদিন পর আবারও একই ঝামেলা হবে। এটা ভাওতাবাজি ছাড়া কিছু না। তার চেয়ে এখনকার নিয়ম ভালো।
অপারেটরদের দাবি, দেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন প্রায় ১২ কোটি গ্রাহক। তাদের মধ্যে ৭ কোটির বেশি গ্রাহক ৩ দিন মেয়াদের ডাটা ব্যবহারে অভ্যস্ত। বিরাট সংখ্যক এ গ্রাহকরা প্যাকেজ কেনা ছেড়ে দেবেন। এতে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। তারা বিটিআরসির কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। বিটিআরসিও তাদের আশ্বাস দিয়েছে বলে দাবি অপারেটর কোম্পানিগুলোর।
খরচ বাড়ার বিষয়ে অপারেটরের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন নিয়মে কোনো প্যাকেজে দাম ঠিক রেখে ডাটা ভলিউম কমানো হবে। আবার কোনোটায় ডাটা ভলিউম ঠিক রেখে দাম বাড়ানো হবে। এতে কিছু বাড়তি খরচ হতে পারে। ভ্যাট, ট্যাক্সের কারণে ইন্টারনেটের দামও বেড়েছে।
গ্রামীণফোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। যেহেতু তারা নিয়ম করেছেন, আমরা সেটা মেনে চলতে বাধ্য। তবে দেখবেন— বিটিআরসি দ্রুতই তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে। কারণ এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ৩ দিনের প্যাকেজে গ্রাহকের আগ্রহ বেশি ছিল। এটা বাদ দেওয়ায় গ্রাহকেরও ক্ষতি, অপারেটরদের ক্ষতি। আমাদের আয় ও সাবস্ক্রাইবার অনেক কমে যেতে পারে।
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বড় সমস্যার মুখে গ্রাহক-অপারেটর সবাই পড়ছে। এটা কিন্তু আমরা বিটিআরসিকে জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেছি। তারা বলেছেন পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।
জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, ‘গ্রাহকদের সুবিধা বিবেচনায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অপারেটররা কী বললেন, সেটা মুখ্য নয়। যদি গ্রাহকদের অসুবিধা হয়, তারা যদি সত্যিই আপত্তি করেন তাহলে বিষয়টি ভেবে দেখা যাবে। আপাতত নতুন নিয়মে চলবে।’