মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে দেশের জনগণের পক্ষে থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, নির্বাচনের আর দুই মাস বাকি। এই সময় মোবাইল ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো সরকারবিরোধী কাজ।
রবিবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের প্রশাসনিক এলাকায় টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির প্রধান কার্যালয়ে দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, কমিশনের কমিশনার-সহ পদস্থ কর্মকর্তা ও মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মোবইল অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট প্যাকেজ কমিয়ে সম্প্রতি নতুন একটি নির্দেশিকা দেয় সরকার। গত ১৫ অক্টোবর এ নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে। এর পর থেকে ইন্টারনেটের বাড়তি দাম নিচ্ছে অপারেটরগুলো। তবে বাড়তি এ দামে ক্ষুব্ধ ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তাঁর প্রশ্ন, গ্রাহকদের সুবিধার কথা ভেবে প্যাকেজ কমানো হয়েছে। বাড়তি দাম নেওয়া হবে কেন?
মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৯ শতাংশের বেশি ৩ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) প্রণীত নতুন এই নির্দেশিকা অনুযায়ী মুঠোফোন অপারেটরগুলো ৭ ও ৩০ দিন মেয়াদি প্যাকেজ দিতে পারবে। এ ছাড়া থাকবে সীমাহীন মেয়াদি (আনলিমিটেড) প্যাকেজ। মোট ৪০টি প্যাকেজ দিতে পারবে অপারেটরগুলো। এত দিন ৩, ৭, ১৫, ৩০ ও সীমাহীন মেয়াদি প্যাকেজ ছিল। অপারেটরেরা মোট ৯৫টি প্যাকেজ দিতে পারত।
চলতি সপ্তাহে দাম কমছে মোবাইল ইন্টারনেটের। বুধবার (৮ নভেম্বর) ডাটা প্যাকেজে সংশোধনী এনে দাম কমাবে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক। আর ১০ নভেম্বরের মধ্যে ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমাবে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবিও। আগের তিনদিন মেয়াদের ডাটা একই দামে সাতদিন মেয়াদেও পেতে পারেন গ্রাহকরা।
তবে নতুন নির্দেশিকার কিছু বিষয় বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিল অপারেটরগুলো। দাম বাড়তে পারে, সে কথা বলেছিল। শেষ পর্যন্ত তা–ই হলো। এক মাস না যেতেই এ নিয়ে আপত্তি জানালেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অপারেটরগুলোকে বাড়তি দাম কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের সাধারণ শ্রেণীর গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে হলে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই স্বল্প সময়ের প্যাকেজগুলি অব্যাহত রাখতে হবে।
বৈঠকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে পুরোনো নির্দেশিকার দামে ফেরত যাওয়ার জন্য অপারেটরদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। এই নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেবেন বলে অপারেটরগুলোকে সতর্কও করেন। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইন্টারনেটের দাম বাড়ুক, সেটা তিনি চান না। আজকের বৈঠকে অপারেটরগুলোর প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত না থাকার জন্যও ক্ষোভ জানান মন্ত্রী।
গ্রাহকদের অভিযোগ, তিনদিন ও ১৫ দিনের ডাটা প্যাকেজ বাতিলের পর অপারেটররা কৌশলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে অনেকেই এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছে। তারা মন্ত্রী ও বিটিআরসিকে দুষছেন। এমন পরিস্থিতিতে বৈঠক ডেকে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে ডাটা প্যাকেজের দাম কমানোর নির্দেশ দিলেন মন্ত্রী।
নতুন নির্দেশিকা প্রসঙ্গে মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব বলেছিল, ৩ দিনের প্যাকেজ না থাকায় গ্রাহকদের এখন বাড়তি দামে ৭ দিনের প্যাকেজ কিনতে হবে। আর্থিক কারণে যাঁরা কম মেয়াদি প্যাকেজ ব্যবহার করেন, তাঁদের ওপর এর প্রভাব পড়বে বেশি। সরকার ও অপারেটর উভয় ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক আর্থিক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ইন্টারনেট গ্রাহকও কমতে পারে।
অপারেটরগুলোর দেওয়া হিসাবে, মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ৬৯ শতাংশের বেশি ৩ দিনের প্যাকেজ ব্যবহার করতেন। দেশে মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় ১২ কোটি। উল্লেখ্য, কেউ সর্বশেষ ৯০ দিনে একবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই তাঁকে গ্রাহক ধরা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, সরকার যখন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বল্প মেয়াদী ইন্টারনেট প্যাকেজ বাদ দিয়ে প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়ে পরোক্ষভাবে ইন্টারনেটের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিটিআরসির নিজস্ব জরিপেই উঠে এসেছে, মানুষ প্যাকেজ বেছে নেয়া স্বাধীনতা চায়। যেখানে অপারেটর ভেদে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ গ্রাহক ৩ দিন বা তারও কম মেয়াদের ইন্টারনেট প্যাকেজ ব্যবহার করেন সেখানে এই সিদ্ধান্তকে গণবিরোধী ছাড়া আর কী-ই বা বলা যায়। প্রান্তিক ও স্বল্প আয়ের সাধারণ শ্রেণীর গ্রাহকদের ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনতে হলে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই স্বল্প সময়ের প্যাকেজগুলি অব্যাহত রাখতে হবে। তাছাড়া অব্যবহৃত ইন্টারনেট ডাটা পরবর্তীতে ব্যবহারের সুযোগ অবশ্যই রাখতে হবে।