বকেয়া আদায়ে বাধ্য হয়ে ব্যান্ডউইথ সীমিত করার পথে হেঁটেছে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলস কোম্পানি (বিএসসিপিএলসি)। তাতেও খুব বেশি সুবিধা করতে পারছে না সংস্থাটি। ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সংস্থাটির পাওনা ৩৫০ কোটি টাকার বেশিও। ব্যান্ডউইথ সীমিত করে গত তিনদিনে মাত্র সাড়ে ১৩ কোটি টাকা আদায় করতে পেরেছে বিএসসিপিএলসি।
শুক্র, শনি ও রোববার (২৪, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর) তিনদিনে ১১টি আইআইজি প্রতিষ্ঠান চাপে পড়ে বকেয়া পরিশোধ করেছে। তবে তাদের বকেয়া ছিল খুবই ছোট অংকের। বকেয়া পরিশোধে কোনো সাড়া না দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বেশি। কোনো চাপেই তারা বকেয়া পরিশোধে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। ফলে জিবিপিএস আপ করছে না বিএসসিপিএলসি। এতে সহসাই সারাদেশে ইন্টারনেটের গতিও স্বাভাবিকও হচ্ছে না। এ সপ্তাহে বিষয়টি সমাধান নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ নভেম্বর দিনগত রাত ১২টায় দেশের অধিকাংশ আইআইজির ব্যান্ডউইথ (তথ্য-উপাত্ত প্রবাহের গতি) সীমিত করে দেয় বিএসসিপিএলসি। এতে ইন্টারনেট সেবায়ও ধীরগতি দেখা দেয়। ব্যান্ডউইথ কমিয়ে দেওয়ার পর বেশকিছু প্রতিষ্ঠান বকেয়া পরিশোধ শুরু করে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১১টি প্রতিষ্ঠান বিএসসিপিএলসির সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। কেউ বকেয়া পরিশোধ করেছে, কেউ আবার বকেয়া পরিশোধে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ফলে তাদের ব্যান্ডউইথ স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে।
বিএসসিপিএলসি সূত্র জানায়, দেশে লাইসেন্সধারী আইআইজি প্রতিষ্ঠান ৩৪টি। এর মধ্যে ১৯টির ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হয়েছিল। ২৩ নভেম্বর রাতে ৫০০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ সীমিত করা হয়। বকেয়া পরিশোধ শুরুর পর ২৪ নভেম্বর রাত থেকে ব্যান্ডউইথ আবার আপ (গতি বাড়তে) করা শুরু করে বিএসসিপিএলসি। সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৩০০ জিবিপিএস আপ করা হয়েছে। বকেয়া পরিশোধে সাড়া পাওয়া গেলে বাকি ২০০ জিবিপিএসও আপ করে দেওয়া হবে।
বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা কামাল আহম্মদ বলেন, ‘গতি কমানোর পর এ পর্যন্ত ১১টি আইআইজি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা বকেয়া পরিশোধ করে ব্যান্ডউইথ রি-স্টোর (আগের অবস্থায় ফেরানো) করে গেছে। বাকিদের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাছে বড় অঙ্কের পাওনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি পাওনা আমরা টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। তারা অনেক ব্যান্ডউইথ নিয়েছিলেন। টাকার অঙ্কে সেটা প্রায় ৬০ কোটি। তারা কোনো সাড়াই দিচ্ছেন না। ৬০ কোটির জায়গায় এখন তারা পাঁচ কোটি টাকাও দিতে চাইছেন না। আমরা তাদের বকেয়া আদায়ে কিছু করতে পারছি না।’
গতি কমানো ৫০০ জিবিপিএসের মধ্যে ৩০০ জিবিপিএস আপ করা হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা কামাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন ৩০০ জিবিপিএস আপ করে দিয়েছি। মানুষ স্বাভাবিক কাজ-কর্ম করতে পারছে। ওই পথটা আমরা বন্ধ করিনি। যত পেমেন্ট পাবো, তত জিবিপিএস আপ করবো। হয়তো দ্রুতই আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো।’
এদিকে, বকেয়া ৩৫০ কোটি টাকার মধ্যে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছেও বড় বকেয়া রয়েছে। সরকারি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের কাছ থেকে পাওনা আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান বিএসসিপিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
তবে ভিন্ন দাবি করেছেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘৩০০ জিবিপিএস নয়, আজকে পর্যন্ত ২০০ জিবিপিএস আপ করেছে বিএসসিপিএলসি। দ্রুত মীমাংসার কোনো সুযোগ তো দেখছি না। এ সপ্তাহেও ইন্টারনেটে ধীরগতিই থাকবে। সহসাই এটার সমাধান হবে বলে তো মনে হয় না।’
নোটিশ ছাড়াই ব্যান্ডউইথ শাটডাউন করা হয়েছে অভিযোগ করে ইমদাদুল হক বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া পড়ে ছিল, সেগুলো তুলতে হয়তো বিএসসিপিএলসি দফায় দফায় চিঠি দিয়েছে। তবে কোনো চিঠিতেই বকেয়া না দিলে শাটডাউন করার কথা জানাননি তারা। হঠাৎ ৫০০ জিবিপিএস কমিয়ে; বলা চলে শাটডাউন করা যৌক্তিক পদক্ষেপ হয়নি বলে আমরা মনে করি।’
এদিকে, সবচেয়ে বেশি বকেয়া পড়ে থাকা আমরা টেকনোলজিসের অফিসিয়াল নম্বরে কয়েক দফা কল করা হলেও রিসিভি হয়নি।