প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত ডেটা নতুন করে একই প্যাকেজে যোগ হওয়ার যে লিমিট ছিল তা তুলে দিয়েছে বিটিআরসি। আগে গ্রাহক ৫০ জিবি পর্যন্ত অবব্যহৃত এই ডেটা একই প্যাকেজে ক্যারি ফরওয়ার্ড পেত বা যোগ হতো। এখন আর এমন কোনো লিমিট নেই এখানে, গ্রাহকের যত ডেটাই অবব্যহৃত থাকুক না কেন তার পুরোটাই পাবেন। এজন্য ‘মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের ডেটা এবং ডেটা প্যাকেজ সম্পর্কিত নির্দেশিকা-২০২৩’ সংশোধন করেছে বিটিআরসি।
নতুন বছরের শুরুতেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত মোবাইল অপারেটরগুলোকে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। অপারেটরগুলো জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে এই নির্দেশনা কার্যকর করেছে। বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খলিল-উর-রহমান বলেন, গ্রাহক স্বার্থের কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। আগে ৫০ জিবি পর্যন্ত ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যেত, এখন যে পরিমাণ ডেটা অবব্যহৃত থাকবে তার পুরোটাই ক্যারি ফরওয়ার্ড পাবেন গ্রাহক।
‘গ্রাহক স্বার্থের বিষয়টি তারা গুরুত্বে সঙ্গে দেখে থাকেন এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে’ বলেন তিনি। সর্বশেষ নির্দেশিকার ৭.৫ ক্লজে বলা ছিল, একটি প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একজন গ্রাহক ওই প্যাকেজটি (ভ্যারিয়েশনসহ মেয়াদ বা ভলিউম ইত্যাদি) পুনরায় কিনলে আগের প্যাকেজটির অব্যবহৃত ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড করতে পারবে আর গ্রাহক সর্বোচ্চ ৫০ জিবি পর্যন্ত এই ক্যারি ফরওয়ার্ড পাবেন।
নতুন সংশোধনীতে বলা হয়েছে, গ্রাহকের ডেটা প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হলে অব্যবহৃত ডেটা বোনাসসহ ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে যদি গ্রাহক আগের প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একই ডেটা প্যাকেজ (আলাদা মেয়াদ হলেও) কেনেন। মোবাইল ইন্টারনেটের প্যাকেজ নিয়ে যা ঘটেছে : মোবাইল ইন্টারনেটের দাম সাশ্রয়ী করতে এবং ইন্টারনেট কেনার প্যাকেজ সহজ করতে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর নতুন ডেটা নির্দেশিকা ঘোষণা করে বিটিআরসি। যা কার্যকর করতে বলা হয় ওই বছরের ১৫ অক্টোবর হতে।
নতুন ওই নির্দেশিকায় স্পেশাল ডে প্যাকেজের সর্বোচ্চ মেয়াদ ৭ দিন করা (আগে এটি ছিল ৩ দিন)। অপারেটর যে প্যাকেজেই দিক না কেন তার মেয়াদ হবে ৭ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড ( আগে এটি ছিলো ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন এবং ৩০ দিন)। একটি অপারেটরের নিয়মিত, বিশেষ, রিসার্চ ও ডেভেলমেন্ট, সব ধরনের ব্র্যান্ড (গ্রামীণফোন, স্কিটো, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক ইত্যাদিসহ যা আছে) মিলিয়ে প্যাকেজের সংখ্যা হবে ৪০টি। আগে এটি ছিল ৮৫টি। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে।
এতে একই ভলিউম এবং একই কন্টেন্টের ৭ বা ৩০ দিন মেয়াদের প্যাকেজ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গ্রাহক ওই প্যাকেজ আবার কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে। ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০ জিবি ডেটা পর্যন্ত। কমানো হয়েছে প্রমোশনাল এসএমএসের সংখ্যাও। আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৪টি এসএমএস দিতে পারত অপারেটররা, এখন দিতে পারবে ৩টি। গ্রাহক তার পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডেটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস ঠিক করে ‘ফ্লেক্সিবল প্ল্যান’ হিসেবে নিজে একটি নিয়মিত প্যাকেজ তৈরি করতে পারবে।
অপারেটররা ৩টি আলাদা ভলিউমের আনলিমেটেড প্যাকেজ অফার করতে পারবে। শুরুতে ২৫ জিবি, ৫০ এবং ৭৫ জিবি হবে। পরে বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে ভলিউম পরিবর্তন করা যাবে।কিন্তু এই নির্দেশিকার ৩ দিনের বা স্বল্পমেয়াদি প্যাকেজ বন্ধ করা নিয়ে মোবাইল অপারেটররা শুরু করে তীব্র আপত্তি। তবে তীব্র আপত্তির পরও ১৫ অক্টোবর রাত হতে বিটিআরসির নতুন ডেটা নির্দেশিকা কার্যকর শুরু করে মোবাইল অপারেটরগুলো। তারা ৩ দিনের ডেটা প্যাকেজ বন্ধ করে দেয়। এবার শুরু হয় গ্রাহকদের সমালোচনা।
সারা দেশে ইন্টারনেটের দাম বাড়িয়ে দেয়ার ব্যাপক অভিযোগ দিতে থাকে গ্রাহকরা। তারা বলেন, ৩ দিনের যে ডেটা যেই দামে কিনতে পারতেন গ্রাহক সেই ডেটা ৭ দিন মেয়াদে সেই দামে আর কিনতে পারছেন না গ্রাহকরা। যেখানে বিটিআরসির নির্দেশনা ছিল, ৩ দিনের মেয়াদে যে পরিমাণ ডেটা যে দামে দেয়া হতো সেই ডেটা একই দামে ৭ দিন মেয়াদেও দিতে হবে। মানে, ৩ দিনের প্যাকেজগুলোর মেয়াদ শুধু বেড়ে ৭ দিন হবে।
গ্রাহকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে এবার বিটিআরসি অপারেটরদের নির্দেশনা দেয়, ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাম ঠিক রেখে ৩ দিনের মেয়াদের প্যাকেজগুলোর মেয়াদ ৭ দিন করতে হবে। এ ছাড়া যেসব প্যাকেজের দাম বেড়েছে সেগুলোকে ১৪ অক্টোবরের পূর্ববর্তী অবস্থায় আনতে হবে।