ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) থেকে আবারও সরে আসতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। ফলে মোবাইল হ্যান্ডসেট বৈধ বা অবৈধ; যেভাবেই দেশে আসুক না কেন, বন্ধ হবে না সিমের নেটওয়ার্ক সংযোগ। এতে ব্যবহারকারীদের দুশ্চিন্তা কমলেও, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন মোবাইল হ্যান্ডসেটের স্থানীয় উৎপাদনকারী এবং বৈধ আমদানিকারকরা।
২০২১ সালের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয় এনইআইআর। এই ব্যবস্থায় ব্যবহারকারীকে নিজের হ্যান্ডসেট নিবন্ধন করে নিতে হতো। এই পদ্ধতিতে ডিভাইস স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু বা বন্ধ হওয়ার সুবিধা রয়েছে। বলা হয়েছিল, এনইআইআর ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু হলে অবৈধভাবে দেশে আসা মোবাইল হ্যান্ডসেটে কোনো স্থানীয় নেটওয়ার্ক অপারেটরের সিম কাজ করবে না। এতে ভ্যাটসহ বিভিন্ন ধরনের শুল্ক দিয়ে বৈধ পথে হ্যান্ডসেট আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক নিরাপত্তা আসবে। বাজারে থাকবে না অবৈধ বা ‘গ্রে’ পথে আসা হ্যান্ডসেট। পাশাপাশি মোবাইল হ্যান্ডসেট চুরি বা হারিয়ে গেলে এবং সেটি দেশেই ব্যবহৃত হলে, সহজেই তা শনাক্ত করা যাবে।
ওই বছরের ১ অক্টোবরের পর থেকে নেটওয়ার্কে নতুন করে সংযুক্ত অবৈধ হ্যান্ডসেটের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কথা ছিল। গ্রাহককে বৈধতা নিশ্চিত করে হ্যান্ডসেট কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বিটিআরসির পক্ষ থেকে। খুদেবার্তার মাধ্যমে বৈধতা যাচাইয়ের সুযোগও দিয়েছিল কমিশন। তবে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের মধ্যেই এনইআইআর কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে আসে বিটিআরসি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বিটিআরসি এনইআইআর নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিটিআরসিতে এক মতবিনিময় সভায় পলক জানান, ছয় মাসের মধ্যে অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধ করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জানুয়ারি এক বিজ্ঞপ্তিতে বিটিআরসি আবারও গ্রাহককে বৈধতা যাচাই করে হ্যান্ডসেট কেনার অনুরোধ করে। এনইআইআর প্রকল্প পুরোপুরি কার্যকর করতে আগামী জুলাই পর্যন্ত সময় লাগবে বলে জানিয়েছিল কমিশন। কিন্তু এখন সেই সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসতে যাচ্ছে বিটিআরসি।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের মধ্যে আসা কোনো হ্যান্ডসেটই বন্ধ হবে না। হ্যান্ডসেটটি বৈধ বা অবৈধ যে পথেই দেশে আসুক না কেন, গ্রাহকের এ বিষয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। গত মঙ্গলবার ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বিটিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে হ্যান্ডসেট বা অন্যান্য প্রযুক্তি পণ্য ব্যবহারে জনগণের যেন ভোগান্তি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। যেহেতু বিটিআরসি দেশে সচল হ্যান্ডসেটের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করে, সেহেতু গ্রাহক ও ব্যবহারকারীদের আলাদা করে ডিভাইস নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া হ্যান্ডসেটের জন্য শুল্ক বা কর দেওয়া হয়েছে কি না, সে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। ফলে হ্যান্ডসেট কীভাবে দেশে এলো সে বিষয়ে এনবিআর এবং প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করতে পারে।
যদিও এই বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি বিটিআরসি। কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, বিষয়টি এখনো সুনির্দিষ্ট না। দাপ্তরিকভাবে আদেশ হলে সবকিছু পরিষ্কার হবে। কয়েক দফা চেষ্টা করেও এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পলকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেশীয় মোবাইল হ্যান্ডসেট ব্র্যান্ড সিম্ফনির মালিকানা প্রতিষ্ঠান এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাকারিয়া শহীদ বলেন, বিটিআরসি কোন যুক্তিতে এমনটা করতে যাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। যদি এটা হয়ে থাকে তাহলে দেশে যারা মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরি করছে এবং যারা বৈধ পথে আমদানি করছে, উভয়েই ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। কারণ অবৈধ পথে যারা হ্যান্ডসেট আনছেন, তাদের বিপরীতে প্রতিযোগিতামূলক মূল্য বাজারে প্রস্তাব করতে পারব না। আমাদের এখন প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ দিতে হয়। ফলে শুরুতেই বাজারে আমরা পিছিয়ে যাব। বিষয়টি শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থের না; বরং পুরো ইন্ডাস্ট্রির। এমন সিদ্ধান্তে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। স্থানীয় উৎপাদকরাও নিরুৎসাহিত হবে।