ইন্টারনেটের ধীরগতি ও বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে, গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট- সবকিছু মিলিয়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছুটা কষ্ট হতে পারে। বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করবো ধৈর্যের সঙ্গে সরকারকে সহযোগিতা করবেন।’
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকালে আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের অডিটোরিয়ামে ‘দীক্ষা-দক্ষতা উন্নয়নে শিক্ষা অনলাইনে’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পলক। এতে সভাপতিত্ব করেন যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘যখন আন্দোলন হয়, বেশি জনসমাগম হলে তখন প্রযুক্তির একটা সমস্যা তৈরি হয়। যখন আমরা লক্ষ্য করলাম সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে গুজব, মিথ্যা, অপপ্রচারকে অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে একটা গোষ্ঠী। দেশে ও দেশের বাইরে থেকে কিছু কনটেন্ট বুস্ট করা হচ্ছে। টাকা দিয়ে মিথ্যা খবর পৌঁছে দেওয়ার অপকৌশল বা ষড়যন্ত্র এটা যখন আমরা দেখছি তখন আমরা মনে করেছি দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যার যতটুকু সক্ষমতা আছে সেটা করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে পুলিশ চেষ্টা করছে মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার, আমরা চেষ্টা করছি সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সবার সহযোগিতা চাচ্ছি।’
এ বিষয়ে পূর্বের কোনো ঘোষণা ছিল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পলক বলেন, ‘আগের কোনো ঘোষণা ছিল না। পরিবেশ পরিস্থিতির ভিত্তিতে, গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতার স্বার্থে আমরা প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি। যত দ্রুত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে আসবে, আইনশৃঙ্খলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, এই আশঙ্কা থেকে মুক্ত হতে পারবো। আমরা লক্ষ্য করছি কোথা থেকে কারা এই অর্থায়নটা করছে, এই কনটেন্টটা করছে। এ জন্য ফিজিক্যাল ও ডিজিটাল ইন্টেলিজেন্স ব্যবস্থা জোরদার করছি। আশা করছি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারবো।’
ভুয়া কনটেন্ট বন্ধে ফেসবুক, ইউটিউবের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে পলক বলেন, ‘তারা সহযোগিতা করলে আমাদের এত কঠোর অবস্থায় যেতে হতো না। আমরা বারবার তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। আজ তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারপরও আমরা খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। কারণ তারা যেসব দুর্বল যুক্তি দেখাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের প্রাইভেসি পলিসি সেটিং আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয় না। তারা দেশভিত্তিক, ঘটনাভিত্তিক প্রতিক্রিয়া দেখায়। এটা তো হতে পারে না। যেহেতু তারা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, অন্য দেশের আইন অনুযায়ী তাদের চলতে হবে। বাংলাদেশের আইন ফেসবুক ও ইউটিউবকে মানতে হবে। আমরা তাদের নির্দেশনা মানতে বাধ্য নই।’
ফেসবুকে-ইউটিউবের উসকানি বাংলাদেশে ছড়িয়ে যাওয়ার পর ছয়টা প্রাণ চলে গেছে উল্লেখ করে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এ রকম আশঙ্কা আমরা আরও করছি। এ ধরনের সুযোগসন্ধানী ষড়যন্ত্র, দেশবিরোধী একটা চক্র আছে। তারা এসব কাজ করছে। তার তথ্যপ্রমাণ এটাই- যদি তাদের অশুভ চিন্তা না থাকতো, দুরভিসন্ধি না থাকতো; তাহলে কি তারা ফেসবুক-ইউটিউবে মিথ্যা তথ্য প্রচারে বুস্ট করতো? এই বুস্টটা করছে কে? এই টাকা দিচ্ছে কে? এটা তো কোনো সাধারণ ছাত্রছাত্রী দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক কর্তৃপক্ষকে বলেছি, আমাদের প্রত্যেকটা প্রাণের মূল্য আছে। এই প্রাণ ঝরে যাক এটা আমরা চাই না। এ ধরনের ক্ষতি আগামী দিনে যদি এদের কারণে হতে থাকে আমরা ছাড় দেবো না।’
অনুষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।