বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের ইতিহাসে আইজিডব্লিউ (ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে) অপারেটর ফোরাম বা আইওএফের ভূমিকা এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রায় এক দশক ধরে এই ফোরাম আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে খাতটিকে এক নতুন যুগে প্রবেশ করালো।
২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদান ছিল এক লাভজনক খাত। ২০১৫ সালে সরকার ২৩টি আইজিডব্লিউ অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়। কিন্তু এরপর এক ধরনের অঘোষিত সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে, যার নেপথ্যে ছিল রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, বিশেষ করে সালমান এফ রহমানের নাম উঠে আসে। এই সিন্ডিকেট আন্তর্জাতিক কলের রেট বাড়িয়ে ব্যবসায় একচেটিয়া দখল প্রতিষ্ঠা করে।
এর ফল হিসেবে, বৈধ কলের প্রবাহ কমে যায় এবং অবৈধ ভিওআইপি কল বেড়ে যায়। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারায়, তেমনি সাধারণ ব্যবহারকারীদের খরচও বেড়ে যায়।
বিটিআরসির সিন্ডিকেট ভাঙার সিদ্ধান্তকে টেলিকম খাতে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কল টার্মিনেশন রেটের অসুস্থ প্রতিযোগিতা রোধ, বৈধতা যাচাই এবং বাজারে ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা হবে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।
বিশেষ করে, ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (এমডিএস)’ নামে একটি তহবিলকে ঘিরে বিতর্ক আরও গভীর হয়। ২০১৫ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত, এই তহবিলের ৯৫% অর্থ বেক্সিমকো কম্পিউটারস লিমিটেডের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ব্যবহার নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন, যা শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পর্যন্ত গড়ায়।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো এখন হলো:
নতুন করে কোনো সিন্ডিকেট তৈরি হবে না তো?
বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ও স্থিতিশীল পরিবেশ কি নিশ্চিত করা যাবে?
সরকারের রাজস্ব কতটা বাড়বে?
বিটিআরসির পদক্ষেপ ইতিবাচক হলেও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন এবং অবকাঠামোগত প্রস্তুতি নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। টেলিযোগাযোগ খাতের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য এটি এক বড় পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।