দেশের ইন্টারনেট ব্যবসায় রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব ছেঁটে ফেলে সব ধরনের বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় ইন্টারনেট সেবার সহজলভ্যতা ও ই-গভর্ন্যান্সের দিক থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। আগামী দিনে তিনটি স্তরে দেশের নেটওয়ার্ক টপোলজি বিন্যস্ত করা হবে। আগামী জুন থেকে এ খাত সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার কাজ শুরু হবে। ইন্টারনেট ব্যবসায় রাজনৈতিক প্রভাব ছেঁটে ফেলা হবে। এ সেবা নিশ্চিত করার পথে সব ধরনের বাধা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দেশের ‘প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ নিয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকের আয়োজন করে পেশাজীবী সংগঠন টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি)।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইন্টারনেট ব্যবসায় অ্যাকটিভ শেয়ারের সুযোগ উন্মোচন করা হবে। এক্ষেত্রে তিন বছরের মধ্যে মেট্রোতে মাটির নিচে শতভাগ টেলিকম ফাইবার স্থাপন করতে হবে। আগামী দুই বছরে বৈশ্বিক সব সূচকে ৩০-এর মধ্যে আনা হবে। এ কাজে নীতি হালনাগাদ করা হবে। এক্ষেত্রে যারা টাকার বস্তা নিয়ে প্রভাবিত করবে, তারা নিজেদের ধ্বংস ডেকে নেবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইন্টারনেটের কোয়ালিটি বিবেচনায় বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় দাম সবচেয়ে বেশি। এখনো শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগের জন্য আলাদা ইন্টারনেট ব্যবস্থা নেই। তাই বৈশ্বিক মানে নিজেকে বিবেচনা করতে পারি না। এজন্য আমাদের প্রথম উদ্যোগ টপোলজি পরিবর্তন। আমরা অনেকগুলো লাইসেন্স তুলে ফেলবো। লাইসেন্স লিমিটেড থাকবে না, লাইসেন্সের শর্ত পূরণের জন্য সময় দেওয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ে তা পূরণে ব্যর্থ হলে জরিমানা করা হবে।
দাম কমানো নিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ঘোষণা ও উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ সহকারী বলেন, একই দামে ১০ এমবিপিএস দিচ্ছেন, ২০ এমপিপিএসও দিতে পারবেন। এটা আপনাদের মনিটর করতে হবে।
ডিডব্লিউডিএম নিয়ে তিনি বলেন, আমরা পেছনের দিকে হাঁটছি না। আমরা বার্তা দিতে চাই, আপনারা যারা ব্যবসায়ী, তারা ব্যবসা করেন। আপনারা রাজনৈতিক বা ইনফ্লুয়েন্সারদের কাছে যাবেন না। আমরা চাই ভয়েস ওভার ও ওয়াইফাই দ্রুত আসুক। আউট ডোরের ওপর থেকে ইনডোরে নিয়ে আসি। যাতে কোয়ালিটিটা নিশ্চিত করতে পারি। একই সঙ্গে টেলকো গ্রেডের ফাইবার নেই। ওভার হেডেড ফাইবারকে টেলকো গ্রেডের বলা যায় না। শতভাগ ফাইবার আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ করার কলাকানুন বন্ধ করে দেবো। ফ্রিল্যান্সাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিনিয়োগে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আমাদের বিশ্বকে দেখানোর দরকার আছে যে ইন্টারনেট আর বন্ধ হবে না। এটা বিনিয়োগকারীদের দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে, সেটা আমাদের দেখাতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী। টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনা করেন মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যামটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঞা।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ইন্টারনেট সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোম চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী, টেলিটকের প্রতিনিধি এ টি এম সাইফুর রহমান খান, বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অফিসার তাইমুর রহমান, রবির সেক্রেটারি ও চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রমুখ।