দেশের মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৫ সালের মার্চ শেষে বাংলালিংকের মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩.৫৯ কোটিতে নেমে এসেছে, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১০ লাখ কম।
২০২৪ সালে বাংলালিংকের গ্রাহকপ্রতি কথা বলার হার ছিল ১৫৪ মিনিট, যা আগের বছর ১৫৮ মিনিট। গ্রাহকপ্রতি আয় ও কথা বলার হারের পাশাপাশি গ্রাহকসংখ্যায়ও নেতিবাচক সূচক দেখছে বাংলালিংক। ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে অপারেটরটির গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ।
তবে ভিওনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে অপারেটরটি গ্রাহকসংখ্যা ৪ কোটি ৪ লাখ, ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে অপারেটরটি গ্রাহকসংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫৮ লাখ। দেখা যায়, এক বছরে বাংলালিংক হারিয়েছে প্রায় ৪৬ লাখ গ্রাহক। এ ছাড়া বিটিআরসির তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতি মাসেই গ্রাহকসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে বাংলালিংকের। গ্রাহক হারানোর পাশাপাশি গ্রাহকপ্রতি মোবাইল ডেটা ব্যবহারেও নেতিবাচক চিত্র দেখেছে বাংলালিংক। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গ্রাহকপ্রতি মাসিক মোবাইল ডেটা ব্যবহারের হার ছিল ৫ দশমিক ৪ জিবি। ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে এটি কমে দাঁড়ায় ৫ দশমিক ১ জিবিতে। গত জুনে বাংলালিংকের গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৪৪ লাখ, যা কমতে কমতে গত ফেব্রুয়ারিতে ৩ কোটি ৮৬ লাখে নেমে আসে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামোগত দুর্বলতা, তুলনামূলক কম নেটওয়ার্ক কভারেজ এবং প্যাকেজে প্রতিযোগিতাহীনতা এই পতনের অন্যতম কারণ। যদিও বাংলালিংক দাবি করে, তারা এখন ‘কোয়ালিটি ওভার কোয়ান্টিটি’ মডেল অনুসরণ করছে এবং “অ্যাকটিভ ও রেভিনিউ-জেনারেটিং” গ্রাহকের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসিন্দা ফারজানা কবির বলেন, “কভারেজ এতটাই খারাপ হয়ে গেছে, যে কল ড্রপ হচ্ছে ঘন ঘন। ইন্টারনেটের গতি তো বলাই বাহুল্য।” এমন অভিজ্ঞতা আরও অনেক গ্রাহকের, যারা অন্য অপারেটরে চলে যাচ্ছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ফ্রিল্যান্সার সায়েম হাসান বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলে ৩-৪ এমবিপিএস এর বেশি গতি পাই না। ভিডিও কলে বারবার ডিসকানেক্ট হয়। এখন রবি ব্যবহার করছি – পার্থক্য বুঝতে পারছি প্রতিদিন।”
বগুড়ার শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান জানান, “বিকালে বা রাতে বাংলালিংক নেট প্রায় কাজই করে না। অথচ রবি বা গ্রামীণফোনে এমন হয় না। বাধ্য হয়েই নম্বর পাল্টেছি।”
অন্যদিকে গ্রামীণফোন ও রবি একই সময়ে নতুন গ্রাহক যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে বাজারে বাংলালিংকের অবস্থান এখন আরও চ্যালেঞ্জের মুখে।
বিটিআরসি সূত্র বলছে, বাংলালিংক নিকট ভবিষ্যতে ৪জি এবং সম্ভাব্য ৫জি পরীক্ষামূলক কার্যক্রমেও পিছিয়ে পড়ছে।