দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে অনিয়ম ও দুর্বল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুযোগে আন্তর্জাতিক গেটওয়ে, আইআইজি ও আইটিসি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্স কমিউনিকেশনের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতি সরকারের কিছু মহলের নীতিগত পক্ষপাতিত্ব এবং নিয়মবহির্ভূত সুবিধা প্রদান বাজারে প্রতিযোগিতা ও ব্যান্ডউইথ নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল), এয়ারটেল ও টাটার মতো বড় ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারীদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ওয়ান এশিয়ার কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট পাওনা ২৩ কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বিটিআরসির পাওনা প্রায় ৪ কোটি, বিএসসিসিএলের পাওনা ১ কোটি টাকার বেশি। এয়ারটেল ১৩ কোটি ও টাটা দাবি করছে ৫ কোটি টাকার বকেয়া।
বিএসসিসিএল-এর একাধিক চিঠির জবাব না পেয়ে এবং পাওনা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে প্রতিষ্ঠানটি আদালতের শরণাপন্ন হয়। ‘আরবিট্রেশন’ মামলায় রায় তাদের পক্ষে এলে পরে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে ‘অ্যাওয়ার্ড এক্সিকিউশন’ মামলা দায়ের করা হয়, যা এখনো চলমান।
টেলিযোগাযোগ খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, ওয়ান এশিয়া রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব ব্যবহার করে আইআইজি, আইটিসি, আইজিডব্লিউসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ লাইসেন্স একে একে লাভ করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানাধীন বেঙ্গল ব্রডব্যান্ড ২০১৬ সালে ডিভিশনাল আইএসপি লাইসেন্স পেলেও সেটি নবায়ন না করেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, মালিকানাধীন আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রিজমা ডিজিটাল নেটওয়ার্কের রয়েছে ন্যাশন ওয়াইড আইএসপি লাইসেন্স।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওয়ান এশিয়াকে এনওসি দেওয়ার সময় মোট বকেয়ার ৫০ শতাংশ এককালীন এবং বাকি অংশ কিস্তিতে পরিশোধের শর্ত দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার স্থলে প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত পরিশোধ করেছে ১ কোটি টাকা।
বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওয়ান এশিয়া অ্যালায়েন্সের মূল কোম্পানি বেঙ্গল কমিউনিকেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসফারিয়া খায়ের কোনো জবাব দেননি। একাধিকবার কল, মেসেজ ও হোয়াটসঅ্যাপে চেষ্টা করা হলেও সাড়া না দিয়ে পরে প্রতিবেদকের নম্বর ব্লক করে দেন তিনি।
আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, “আইআইজি বা ব্যান্ডউইথ সরবরাহকারীদের অনিয়ম আইএসপি সেবার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিষয়টি শুধু আর্থিক নয়, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “টেলিযোগাযোগ খাতের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নীতিমালার আলোকে নিয়মিত মূল্যায়ন প্রয়োজন। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়ম থাকলে তা আইনানুগভাবে সমাধান হওয়া উচিত।”
বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম হোসেন বলেন, “অনেকবার তাগাদা দিলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো জবাব দেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টার কার্যালয়ের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়ব বলেন, “সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে বিশ্বাসী। তবে কেউ যদি পাওনা পরিশোধ না করে অনিয়মে জড়ায়, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।”