নতুন অর্থবছরের বাজেটে টেলিকম খাতের প্রাপ্তি নিয়ে একরাশ হতাশায় মোবাইল অপারেটররা। ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ডিজিটাল সেবা গ্রহণে আগ্রহী সব গ্রাহককে নিঃসন্দেহে বাড়তি চাপে ফেলবে।
বাজেটে মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্প সংশ্লিষ্ট খাতে যে সব কর আরোপ করা হয়েছে তা অত্যন্ত দু:খজনক। প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য বাস্তবায়নে মোবাইল টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্ব একটি বড় হোঁচট খাবে । ইতিমধ্যে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত উচ্চ করের বোঝায় জর্জরিত, যা বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। উচ্চ করের বোঝা নিয়ে এ শিল্প সামনে কতোদিন টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে খাত সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক ও বিশেষজ্ঞরা বার বার তাঁদের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন।
বিদ্যমান কর কাঠামোতেই বাজারে টিকে থাকা চারটি অপারেটরের মধ্যে তিনটিকেই বছরের পরে বছর লোকসানের বোঝা টেনে যেতে হচ্ছে।
লোকসান গুনলেও এতদিন তিন অপারেটরের বিনিয়োগকারীদের অনেকটা বাধ্য হয়েই দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে নূন্যতম কর দিয়ে আসতে হচ্ছিল। এবারের বাজেট নূন্যতম এ কর হার বাড়িয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে, যা আমাদের যারপরনাই হতাশ করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে যে মোবাইল অপারেটররা বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে, তাদের ওপর এমন কর হারের চপেটাঘাত একেবারেই অপ্রত্যাশিত। টিকে থাকার যুদ্ধে হিমশিম খাওয়া মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পের যখন প্রয়োজন সহযোগিতা ঠিক সে সময়ে এমন কর হার আরোপ আত্মঘাতী।
সব ধরনের মোবাইল পরিষেবা গ্রহণে সম্পূরক শুল্ক হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত ডিজিটাল সেবা গ্রহণে আগ্রহী সব গ্রাহককে নিঃসন্দেহে বাড়তি চাপে ফেলবে। একই সাথে মোবাইল ফোনের সিম কর ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা করার প্রস্তাবনাও নতুন গ্রাহক আকৃষ্ট করার খরচ দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেবে। এখন নতুন মোবাইল সংযোগ যারা কিনছেন তাদের বেশিরভাগই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের ওপর ১০০ টাকার বাড়তি সিম কর ও বাড়তি ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বোঝা হয়ে দাঁড়াবে । এমন পদক্ষেপ জাতিসংঘ ঘোষিত এবং সরকার অনুমোদিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের পথকে রুদ্ধ করবে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলা মোবাইল টেলিযোগাযোগ শিল্পের বিষয়ে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে এবং প্রস্তাবিত করহারগুলো প্রত্যাহার করে নেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চালিকাশক্তি হিসেবে ৫জি, আইওটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো সেবা প্রদানে আগামীতে বিপুল বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এ বিনিয়োগের সংস্থান নিশ্চিত করতে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে টেলিযোগাযোগ খাতের স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি । আমাদের বিনীত নিবেদন, প্রস্তাবিত কর হার প্রত্যাহার করে এ খাতের জন্য একটি ইতিবাচক কর নীতি প্রণয়ন করা হোক। এতে এ খাত উপকৃত হবে, সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে এবং সর্বোপরি দেশের জনগণের মানসম্পন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।