কোটি কোটি অ্যাকাউন্ট মুছে দেওয়ার হুমকি দিয়ে অ্যাপলের কাছ থেকে ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের আইটিউনস কার্ড আদায়ের চেষ্টা করেছিলেন এক হ্যাকার। ২০ ডিসেম্বর ওই হ্যাকারকে সাজা দিয়েছেন লন্ডনের এক আদালত।
নিজেকে হ্যাকিং গ্রুপ ‘টার্কিশ ক্রাইম ফ্যামিলি’র সদস্য বলে দাবি করেন কেরেম আলবেরাক নামের ওই হ্যাকার। উত্তর লন্ডনের বাসিন্দা আলবেরাক নিজ দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় লন্ডনের ‘সাউথওয়ার্ক ক্রাউন কোর্ট’ দুই বছরের জেল স্থগিত করে তিনশ’ ঘণ্টা বেতনহীন শ্রম ও ছয় মাসের বৈদ্যুতিক কারফিউয়ের সাজার রায় দিয়েছেন। — খবর মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসের।
আলবেরাক যুক্তরাজ্যের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের (এনসিসিইউ) নজরে প্রথম আসেন ২০১৭ সালে। ওই বছরের মার্চে মার্কিন টেক জায়ান্ট অ্যাপলের সঙ্গে যোগাযোগ করে লাখো আইক্লাউড অ্যাকাউন্টের বিশেষ তথ্য বা উপাত্ত হাতে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। ২৫ কোটি আইক্লাউড অ্যাকাউন্ট ও আরও বেশ কিছু অ্যাপল অ্যাকাউন্টের তথ্য ফ্যাক্টরি রিসেটের মাধ্যমে মুছে দেওয়ার হুমকিও দেন অ্যাপলকে। সবমিলিয়ে ৩১ কোটি ৯০ লাখ অ্যাকাউন্ট হুমকির সম্মুখীন বলে জানান তিনি।
ডেটা মুছে দেওয়া ছাড়াও তা অনলাইনে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেন আলবেরাক। ঝামেলা মেটাতে অ্যাপলের কাছে ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের আইটিউনস কার্ড দাবি করে বসেন তিনি। এদিকে, ওই সময়টিতেই আইওএস ১৩.৩ নিয়ে বেশ সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল অ্যাপল। আইফোন ব্যবহারকারীদেরকে আইওএস আপডেট করানোর পরামর্শ দিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি।
মার্চ ২৩, ২০১৭ সালের এক অনলাইন পোস্টে অবশ্য আলবারক দাবি করেছেন, এক জনের জন্য ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের আইটিউনস কার্ড নয়, হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত মোট সাত জনের জন্য মাথাপিছু ৭৫ হাজার ডলার মূল্যের আইটিউনস কার্ড ও বাড়তি বেশ কিছু জিনিস চাওয়া হয়েছে অ্যাপলের কাছ থেকে।
আসলেও যে অ্যাকাউন্টে প্রবেশাধিকার রয়েছে তা প্রমাণ করতে এক ইউটিউব ভিডিও পর্যন্ত তৈরি করেন তিনি। ওই ভিডিওতে তাকে এরকম একটি অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ভিডিওটি অ্যাপল নিরাপত্তা ও গণমাধ্যমেও পাঠিয়ে দেন আলবেরাক। কিন্তু নিজের গতিবিধি ভালোভাবে লুকোতে পারেননি তিনি। হদিস পেয়ে মার্চের ২৮ তারিখ আলবেরাক’কে গ্রেপ্তার করেন এনসিএ কর্মকর্তারা।
গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, আদতে অনেক কম অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে আলবেরাকের হাতে। অ্যাপলের মূল নেটওয়ার্কেও কোনো অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেন এনসিএ কর্মকর্তারা। আলবেরাকের হাতে যেটুকু ডেটা ছিল, তা বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষীয় সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করা। সেবাগুলোর অধিকাংশই বর্তমানে বন্ধ বলেও জানায় এনসিএ।
হুমকি এবং ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে কম্পিউটার প্রবেশে বাধা ও প্রতিরোধ সৃষ্টির অননুমোদিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনা হয় আলবেরাকের নামে। অভিযোগ স্বীকার করে নেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে এনসিএ’র জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা অ্যানা স্মিথ জানান, “আলবেরাকের ভুল ধারণা ছিল যে, দুটি অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ও বড় মাপের বহুজাগতিক কর্পোরেশনকে হুমকি দিয়েও তিনি আইনের হাত থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন।”
স্মিথ আরও বলেন, “তদন্তের সময় পরিষ্কার হয়ে এসেছে যে তিনি আদতে পরিচিতি ও সম্পদের ঝোঁক থেকেই কাজটি করেছেন।”