আমরা প্রায় প্রস্তুত। আমরা আসছি। গুগলকে এভাবেই সতর্ক করে দিল চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে। প্রশ্ন উঠছে, হুয়াওয়ে কি সত্যিই গুগলের বিকল্প কিছু দাঁড় করাতে পেরেছে? সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট দেখে মনে হচ্ছে আমরা দ্রুতই এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাব। হুয়াওয়ের একজন কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তাঁরা খুব দ্রুতই গুগল অ্যাপসের বিকল্প ই-মেইল, মেসেজিং, ম্যাপস, পেমেন্টসহ প্রয়োজনীয় সব গুরুত্বপূর্ণ সেবা দাঁড় করিয়ে ফেলবেন। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হুয়াওয়ের পরবর্তী ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোন পি৪০ গুগলের বিকল্প সেবা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করবে। এখন পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত নয়, কিন্তু ২০২০ সালে হুয়াওয়ের পণ্য উন্মোচন নিয়ে এখন জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। মার্কিন বিজনেস ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’ তাদের এক প্রতিবেদনে এমনটিই বলছে।
সম্প্রতি হুয়াওয়ে কনজ্যুমার গ্রুপ ভারতের প্রধান চার্লস পেং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘ইকোনমিক টাইমস’কে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব এইচএমএস (হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস) আছে এবং আমরা একটি মোবাইল ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। ন্যাভিগেশন, পেমেন্টস, গেমিং এবং মেসেজিংয়ের মতো প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো খুব দ্রুতই প্রস্তুত হয়ে যাবে।’
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ সব শঙ্কা কাটিয়ে এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে। চার্লস পেংকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ভোক্তারা জিএমএস (গুগল মোবাইল সার্ভিসেস) ও এইচএমএসের (হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস) মধ্যে কোন তফাৎ শনাক্ত করতে পারবেন না। গুগল মোবাইল সার্ভিস হলো একটি লাইসেন্সড সফটওয়্যার, যা উন্মুক্ত উৎস হিসেবে অ্যান্ড্রয়েড ও বিভিন্ন সংস্করণে বাজারে রয়েছে। হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস (এইচএমএস) হলো হুয়াওয়ের নির্মিত জিএমএসের (গুগল মোবাইল সার্ভিসেস) বিকল্প সংস্করণ।
‘ইকোনমিক টাইমস’–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হুয়াওয়ে ও তার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান অনার ভারতের অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে যাতে গুগল অ্যাপসগুলোকে এইচএমএসের (হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস) উপযোগী করে রূপান্তর করা যায়।
পেং বলেন, ‘ভোক্তাদের ভালো অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য আমরা ডেভেলপারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেছি। আমরা যেটা করার চেষ্টা করছি সেটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ।’
এই চ্যালেঞ্জ অনুধাবন করা সহজ নয়। সাধারণ অ্যাপগুলোকে একটা নতুন প্ল্যাটফর্মে নিয়ে যাওয়া এক কথা, কিন্তু জি–মেইল, ইউটিউব, গুগল পে ও গুগল ড্রাইভের মতো দৈনন্দিন জীবনের অ্যাপগুলোকে প্রতিস্থাপন করা একদমই ভিন্ন কথা।
পেং এটাও বলেছেন, ভারতীয় ও চীনা ডেভেলপাররা ইউরোপসহ অন্যান্য অঞ্চলে বিকল্প হিসেবে এইচএমএস (হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিসেস) গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
পেং ‘ইকোনমিক টাইমস’কে বলেন, ‘প্রতিটি দেশে আমরা ভোক্তাদের জন্য শীর্ষ ১০০-১৫০ অ্যাপসের এইচএমএস ভার্সন নিয়ে আসার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা ডেভেলপার, কনটেন্ট এবং সেবা প্রদানকারীদের সঙ্গে একটি এন্ড টু এন্ড ব্যবসায়িক মডেল গড়ে তুলব।’
এটা হুয়াওয়ের জন্য একটা কঠিন পরীক্ষা। পরিপূর্ণ অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতার বিকল্প তৈরি না করতে পারলে হুয়াওয়ে এ বাজারে টিকতে পারবে না। এক সপ্তাহ আগে, হুয়াওয়ের বৈশ্বিক প্রধান রিচার্ড ইউ ফ্রান্সভিত্তিক গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী মার্চ মাসের শেষে পি৪০ উন্মোচন করা হবে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, পি৪০ গুগল ছাড়া চলতে সফল হয়েছে এবং গুগলের শূন্যতা পূরণে পুরোপুরিভাবে কার্যকর।
ফ্রান্সভিত্তিক গণমাধ্যমটির সেই প্রতিবেদন থেকে ধারণা করা হচ্ছে, হুয়াওয়ে মোবাইল সার্ভিস তৈরি হয়ে গেছে এবং বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এইচএমএস চলে আসবে এবং তখন শুরু হবে আসল প্রতিযোগিতা। হুয়াওয়ে ও গুগল দুপক্ষই চেষ্টা করবে কোটি কোটি গ্রাহককে নিজের দলে টানতে।