বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্পের পথিকৃত ওয়ালটন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ওয়ালটন এখন একটি মাল্টিন্যাশনাল ব্র্যান্ড। দীর্ঘদিন ধরে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিতে রেখে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। যার ফলে কমেছে আমদানি। বেড়েছে দেশজ উৎপাদন। সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। এরই স্বীকৃতিস্বরূপ হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)’র কাছ থেকে সেরা আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার পেলো ওয়ালটন গ্রুপ।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি ২০২০) সন্ধ্যায় রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলের বলরুমে আয়োজিত ‘ফার্স্ট এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডস’ অনুষ্ঠানে ওয়ালটনসহ মোট আটটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেয়া হয়। ‘বেস্ট ইন ইমপোর্ট সাবস্টিটিউশন’ ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার জিতে নেয় দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য জায়ান্ট ওয়ালটন। ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কিংবা তারও বেশি আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেরা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার পেলো ওয়ালটন।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তার কাছ পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড-এর পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফ্রাঁসোয়া দ্য ম্যারিকো এবং ডেপুটি সিইও মাহবুব উর রহমান।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার হাওলাদার, আন্তর্জাতিক ব্যবসা ইউনিট (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, ফার্স্ট সিনিয়র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর শাহানা আক্তার শম্পা, ডেপুটি ডিরেক্টর মুনিমা চৌধুরী নদী ও অগাস্টিন সুজন এবং এসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মির্জা মারুফ-উর-রহমান।
উল্লেখ্য, দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড দিলো এইচএসবিসি। এ উদ্যেগে এইচএসবিসিকে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড।
পুরস্কার প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, বাংলাদেশে সব ধরনের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য আমদানি হয়ে আসছিলো। কিন্তু এসব পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় সবার পক্ষে কেনা সম্ভব ছিলো না। দেশের মানুষ যাতে সাশ্রয়ী দামে প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য পেতে পারেন, সেজন্য ২০০৮ সালে নিজস্ব কারখানায় আমরা উৎপাদন শুরু করি। স্থানীয় আবহাওয়ার উপযোগী করে মানুষের পছন্দ, রুচি, চাহিদা ও ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদিত সর্বাধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ এসব পণ্য খুব অল্প সময়ে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে নিয়েছে। এর ফলে বিপুল পরিমাণ আমদানি ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। পাশাপাশি এসব পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাধ্যমে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা।
তিনি আরো বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ওয়ালটনকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত করা। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগযুক্ত ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া। আমাদের বিশ্বাস খুব শিগগিরই বাংলাদেশ হবে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের হাব বা কেন্দ্র। এ লক্ষ্য অর্জনে ‘এইচএসবিসি বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রেরণা যোগাবে।
উল্লেখ্য, ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও আইসিটি পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে ওয়ালটন এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। এসব দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ওয়ালটন পণ্য সুনাম কুড়িয়েছে। যার ফলে বহিঃবির্শ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হচ্ছে। একই সঙ্গে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস এবং রপ্তানি ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে ওয়ালটন।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ওয়ালটন বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছে। যার মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে ২০১৮ সালের জাতীয় পরিবেশ পদক, বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড-২০১৯, ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৫, গ্লোবাল ব্র্যান্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ এবং ডিএইচএল-ডেইলি স্টার বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় শীর্ষ ভ্যাট প্রদানকারী হিসেবে গত ৮ বছর ধরে ওয়ালটন প্রথম পুরস্কার পেয়ে আসছে।
ওয়ালটন ছাড়াও এইচএসবিসি পুরস্কারপ্রাপ্ত অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো স্কয়ার গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, জনতা সাদাত গ্রুপ, অ্যামিগো বাংলাদেশ লিমিটেড, ম্যাক্স গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ব্র্যাক।