চলতি বছর পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত ফোন বিক্রি ২০ কোটি ইউনিট ছাড়াবে। বিশ্বের অনেক বাজারে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হওয়ায় ফাইভজি ফোন বিক্রিতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে এমনটাই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর ফোন রাডার।
গোল্ডম্যান স্যাকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর যতসংখ্যক ইউনিট ফাইভজি ফোন বিক্রি হবে, তা গত বছর বিক্রি হওয়া ফাইভজি ফোনের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। চলতি বছর বেশির ভাগ ফাইভজি ফোন বিক্রি হবে চীনের বাজারে। দেশটির শতাধিক শহরে এরই মধ্যে ফাইভজি নেটওয়ার্ক সেবা চালু করা হয়েছে। একই সঙ্গে চলতি বছর ফাইভজি বেস স্টেশন স্থাপন বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সেলফোন অপারেটরগুলো ফাইভজি প্রযুক্তিতে সেবা দিতে কার্যক্রম জোরদার করেছে।
বিশ্বজুড়ে গত বছর ৩২টি দেশ এবং অঞ্চল ফাইভজি নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক অ্যাপ্লিকেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে। এছাড়া গত বছরের মাঝামাঝি সময় ৬০টি নেটওয়ার্ক অপারেটর কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে ফাইভজির কার্যক্রম শুরু করেছে। এ সংখ্যা গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ৬৫টিতে পৌঁছেছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত ফোন বিক্রি ৫৪ লাখ ইউনিট ছাড়িয়েছে। চায়না ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি একাডেমি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ খাতে দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি। একই সঙ্গে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন ডিভাইসের চাহিদা বাড়ছে। টেলিযোগাযোগ খাতের গুরুত্বপূর্ণ বাজার চীন ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুতে এগিয়ে রয়েছে। যে কারণে দেশটিতে ফাইভজি ফোনের চাহিদা বেড়েছে।
বিভিন্ন ডিভাইস ব্র্যান্ড গত বছরের শেষ মাসে চীনে ৩৫টি মডেলের নতুন স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। একই সময় দেশটিতে সরবরাহকৃত মোট স্মার্টফোনের মধ্যে ৫৪ লাখ ১৪ হাজার ইউনিট ফাইভজি স্মার্টফোন ছিল। এছাড়া গত ডিসেম্বরে চীনের ব্র্যান্ডগুলো আরো ১১টি নতুন ফাইভজি ফোন উন্মোচনের জন্য তালিকাভুক্ত করেছে। সামগ্রিকভাবে গত বছর দেশটিতে স্মার্টফোন সরবরাহ ৩৮ কোটি ৯০ লাখ ইউনিটে পৌঁছেছে এবং বছরজুড়ে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন বিক্রি ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ইউনিটে পৌঁছেছে।
বিভিন্ন বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারে নেতৃত্ব দেবে চীনভিত্তিক হুয়াওয়ে। বাজারটিতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে থাকবে যথাক্রমে মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ও দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক স্যামসাং।
চায়না ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি একাডেমির প্রতিবেদনে চীনে পাওয়া যাচ্ছে এমন ফাইভজি স্মার্টফোন সিরিজের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো জিটিই অ্যাক্সন ১০ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ২০এক্স ফাইভজি, হুয়াওয়ে মেট ৩০ সিরিজ, হুয়াওয়ে মেট এক্স (ফোল্ডিং), অনার ভি৩০ সিরিজ, চায়না মোবাইল পাইওনিয়ার এক্স১, ভিভো আইকিউওও প্রো ফাইভজি, ভিভো নেক্স৩ ফাইভজি, স্যামসাং নোট ১০ প্লাস ফাইভজি, শাওমি মি৯ প্রো ফাইভজি, হুয়াওয়ে নোভা ৬ ও অপো রেনো৩ প্রো ইত্যাদি।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ডাটা করপোরেশন (আইডিসি) এর আগে জানিয়েছিল, চলতি বছর চীনের স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলোর ডিভাইস সরবরাহে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে, যা গত বছরের চেয়ে দশমিক ৭ শতাংশ বেশি হতে পারে। এছাড়া চলতি বছর দেশটিতে ফাইভজি স্মার্টফোন সরবরাহে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।
‘চায়না মোবাইল ২০২০ টার্মিনাল প্রডাক্ট প্ল্যান’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছর চীনের ফাইভজি স্মার্টফোন বাজারের আকার ১৫ কোটি ইউনিটে পৌঁছবে। এছাড়া চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে ফাইভজি ফোনের দাম এখনকার চেয়ে এক-দেড় হাজার ইউয়ান কমবে।
বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ টেলিযোগাযোগ বাজারে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যবহারের দিক থেকে ফোরজির চেয়ে ফাইভজির বিস্তার দ্রুত হচ্ছে। উন্নত ও দ্রুতগতির এ নেটওয়ার্ক সেবা ব্যবহারে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোন প্রয়োজন। যে কারণে ফাইভজি সমর্থিত স্মার্টফোনের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে ফাইভজি ফোনের চাহিদা বৃদ্ধি সামগ্রিক স্মার্টফোন বাজারের মন্দা ভাব কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বজুড়ে ফাইভজির পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরুর লক্ষ্যে কার্যক্রম জোরদার করেছে সেলফোন অপারেটরগুলো। এ মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকেও ফোরজির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে।