অনলাইনে ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের তথ্য (ছবি, ভিডিও, অডিও ইত্যাদি) প্রকাশের হুমকি দিয়ে কারো থেকে অনৈতিকভাবে কোনো কিছু আদায় করার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। এ ধরনের সাইবার অপরাধকে বলা হয় সেক্সটোরশন বা যৌন চাঁদাবাজি। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত অন্তরঙ্গ মুহূর্তের তথ্য ধারনে প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের সতর্ক হতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া দেশের প্রচলিত আইনের দুর্বলতার কারণেও এ ধরনের অপরাধকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
মঙ্গলবার এক আলোচনায় এসব কথা উঠে এসেছে। ‘সেক্সটোরশন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক পরামর্শ সভার আয়োজন করে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন (সিসিএ ফাউন্ডেশন)। অনলাইনে এই ওয়েবিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন খন্দকার ফারজানা রহমান, ব্র্যাক বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার সাইমুম তালুকদার ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান। সভায় বাংলাদেশে সেক্সটোরশনের প্রবণতা বিষয়ে পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনা দেন সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ।
খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, সেক্সটোরশন প্রতিরোধে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের কনটেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা দরকার। কারণ আমরা দেখেছি দেশের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তির ভিডিও তিনি প্রকাশ না করলেও অন্য কোনোভাবে সেটি প্রকাশ হয়েছে এবং এজন্য তাকে ভুগতে হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের কনটেন্ট তৈরির আগেই সাবধান হতে হবে।
সাইমুম তালুকদার বলেন, ডিজিটাল ডিভাইসের কোনো তথ্য মুছে ফেলার পরেও কিন্তু পুরোপুরি সেটি মুছে না। এর একটি অংশ ঠিকই কোথাও থেকে যাচ্ছে। তাই ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি বা ভিডিও তৈরি করার আগে ক্ষতিকর বিষয়গুলো ভাবা উচিত। এজন্য প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি নিয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কাজ করা দরকার।
মনিরা নাজমী জাহান বলেন, ব্যক্তিগত মুহূর্তেও তথ্য প্রচার হলে কোনো ক্ষতি হবে কি না এটা আগে ভাবতে হবে। অন্তত নিজের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হলেও বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের কনটেন্ট রাখা উচিত নয়।
সভায় জানানো হয়, দেশে বর্তমানে সেক্সটোরশনের ঘটনাগুলো পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে যথাক্রমে ২৩২, ২০৬, ২৮০, ৩৭৩ ও ৫৪০টি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেই আইনেও সেক্টটোরশনের মতো অপরাধকে ঠিকভাবে সংজ্ঞায়িতই করা হয়নি। একইভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও সেক্টটোরশন বিষয়ে কিছুই নেই। তাই এ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আলোচকরা।