বাঙালির অন্যতম ফ্যাশন কুমিল্লার খাদি কাপড়। মূলত স্বদেশী কাপড়ের ব্যবহার বাড়াতে ১৯২১ সালে উৎপত্তি হয়েছে খাদি শিল্পের। খাদি কাপড়ের স্থানীয় চাহিদা মেটাতে কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন গ্রামে মাটির নিচে গর্ত করে পায়ে চালানো প্যাডল দিয়ে তাঁত চালিয়ে তৈরি করা হয় খাদি কাপড়। এ পদ্ধতি এখনো বিদ্যামান। খাদি কাপড়ে গুরুত্ব দিয়ে কুমিল্লা অভয়াশ্রম, চান্দিনায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত তাঁতশিল্প প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
তৎকালিন সময়ে খাদি শিল্পের সুনাম বাড়াতে নিরলস ভাবে কাজ করেছিল, ড.আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত দি খাদি কো-অপারেটিভ অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড, দ্য খাদি এন্ড কটেজ ইন্ড্রাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়াও কাজ করছে মহাজন, ব্যবসায়ী ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সাধ্যের মাধ্যে দাম থাকায় এবং দেশীয় পণ্য হওয়ায় জনপ্রিয়তা পায় দ্রুততার সাথে।
খাদি কাপড় বুননে বৈচিত্র্য এনে বংশ পরম্পরায় পাওয়া পেশা ধরে রেখেছে এ শিল্পের তাতিরা। তারা জানায়, যুগ যুগ ধরে মানুষের পছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে পোশাক তৈরি করায় খাদি কাপড়ের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ন রয়েছে নারী-পুরুষনির্বিশেষে।
প্রথমে হাতে কাটা তুলার সুতা দিয়ে বোনা হয় খাদি থান কাপড়। তারপর চাহিদা অনুযায়ী তৈরি করা হয় শাড়ি, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ইত্যাদি। বর্তমানে নানা রকম ফিউশন আনায় বৃদ্ধি পেয়েছে খদ্দরের ব্যবহার। জানা যায়, বিছানার চাদর এবং নকশিকাঁথাও তৈরি হয় খাদি কাপড় দিয়ে।
গত কয়েক দশকে বিভিন্ন কারণে খাদি কাপড় ব্যবহারে ভাটা পরেছে। বর্তমানে ফেসবুক তথা ইন্টারনেটে খাদি কাপড় নিয়ে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে পুরানো জনপ্রিয়তা ফিরে আসছে এ শিল্পে।
তাতি রঞ্জিত দেবনাধ বলেন, “আমার দাদা, দিদি, জেডি পোকা পাইল্যা পোকা থেইক্কা হুতা তৈরি কইরা কাপড় বানাইতো।” খাদি শিল্পের অতীত স্মৃতিচারণ করে মাদব চন্দ্র নাথ বলেন, ”আমার দিদার মুখে শুনেছি তাতিদের আয়রোজগার এতই ছিলো দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ট্রাঙ্ক ভর্তি টাকা নষ্ট হয়ে গেছিল।”
ই-কমার্সের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে খুব সহজে বিক্রি হচ্ছে খাদি কাপড়। ড. আনিছুর রহমান আকন্দ বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থাকা অবস্থায় কুমিল্লার খাদি কাপড় ব্যবহার করতাম। বর্তমানে শেরপুরে চলে আসায় ব্যবহার করা হয় না। তবে গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে কুমিল্লার খাদি কাপড় দেখে অর্ডার করি এবং শেরপুরে বসে ৩ দিনে ডেলিভারি পেয়ে গেছি ই-কমার্সের কল্যাণে। অনলাইনে কেনাকাটা সহজ হওয়ায় নিয়মিত ব্যবহার করতে পারবো পছন্দের খাদি কাপড়।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদি কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী খাদি কাপড়ের চাহিদা পূরণে তাতী, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা বাড়তে ব্যাংক, এনজিউ ও ব্যাংক আগ্রহী রয়েছে।
লেখক : ইমরান হোসেন, প্রতাপ পলাশ ও দেলোয়ার হোসেন।