এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা, তাই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এবং বিশ্ব। বিশ্বায়নের এ যুগে নারী শুধু সৌন্দর্যের প্রতীক বিবেচ্য না হয়ে, জ্ঞানের প্রতীক বলেও প্রতিষ্ঠা পাবে এটাই কাম্য।
১৯৭৫ সালে ৮ মার্চ কে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষনা করেছিল, সেই থেকে এই দিনটা সারাবিশ্বে নারীদের জন্য পালিত হয়। এই দিবসের মূল উদ্দ্যেশ্য সারবিশ্বে নারীদের অধিকার, সম্মান, মর্যাদা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে বছরে এই একটা নির্ধারিত দিন নারীদের জন্য কতটা সুফল বয়ে আনে এটা খুব সুস্পষ্ট নয়, কারণ নারী হিসেবে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার এ লড়াইটা প্রতিদিনের এবং এও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সমাজে নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অন্যতম অন্তরায় নারী নিজেই। নারীদের ইচ্ছাশক্তির অভাব, চ্যালেঞ্জ নেয়া, জ্ঞানার্জন এবং আত্মোন্নয়নের সদিচ্ছার অভাবই পিছিয়ে রাখে অধিকাংশ নারীদেরকে।
আর এর মাঝেও আবার কিছু নারী যারা নারী স্বাধীনতার কথা বলে, নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে তারাও আসলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা এবং অধিকারের আসল অর্থটাই বুঝতে ভুল করে। স্বাধীনতা বা অধিকার যাই বলেন না কেন, তা প্রতিষ্ঠার যোগ্যতা আপনাকে প্রথমে অর্জন করতে হবে এবং নিজেকে নারী ভাবার আগে মানুষ ভাবতে হবে। একজন মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং অধিকারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, তারপর নারী হিসেবে পুরুষের সাথে লিঙ্গের পার্থক্যটাও বুঝতে হবে। সব সময় শুধু নারীদের অত্যাচার নির্যাতনের কথা প্রচার হলেও, সৃষ্টিজগতের আসল সত্য হল- দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। মানে এখানে নারী, পুরুষ বা প্রাণীজগতের অন্য প্রাণী সবার ক্ষেত্রেই এটা সত্য। আর তাই নারী মুক্তির একমাত্র পথই হলো- জ্ঞান আর দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজের যোগ্যতা এবং শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করা এবং অবশ্যই নারী পরিচয়ে সবক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা আর সহানুভূতি পাওয়ার ভাবনাটাও বাদ দেয়া। নারীর যোগ্যতাই পারে প্রকৃত সম্মান এনে দিতে। নিজেকে প্রথমেই দুর্বল ভেবে পিছিয়ে না থেকে বরং নিজের বিশেষত্ব আবিষ্কারে মনোনিবেশ করতে হবে এবং সময় শ্রম দিয়ে সেই বিশেষত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে। ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের এই বিশ্বায়নের যুগে নারী পুরুষ উভয়ের জন্যই টিকে থাকার অন্যতম হাতিয়ার জ্ঞান আর দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মেধা মননের উন্নয়ন। দেশে এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তেই কোনো না কোনো নারী নিজেদেরকে প্রমান করার মাধ্যমে আমাদের জন্য অনুসরনীয় উদাহরণ তৈরী করে যাচ্ছেন। আমরা তাদের কথা জানব এবং সেখান থেকে নিজেদের জন্য অনুপ্রেরণা আর শক্তি খুঁজে নিব।
দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স সেক্টরে সফল নারী উদ্যোক্তা যারা
কাকলী তালুকদার
জামদানী রানী নামে পরিচিত এখন তিনি। উনার হাত ধরেই আবারও জনপ্রিয়তা ফিরে পেয়েছে দেশের ঐতিহ্যবাহী জিআই পণ্য জামদানী। কাকলী ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত এডেক্সেল ট্রেইনার হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, কিন্তু পারিবারিক সমস্যার কারণে সেই জব ছেড়ে দিতে হয়। বর্তমানে তিনি একজন অনলাইন উদ্যোক্তা, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ‘কাকলী’স অ্যাটিয়্যার’। তিনি এখন একজন মিলিয়নার দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা, যার সাকসেস স্টোরি অনুপ্রাণিত করছে আরও অসংখ্য নারী উদ্যোক্তাদেরকে। জামদানী প্রোডাক্টে বিভিন্ন ফিউশন তৈরী করে তিনি দেশে এবং দেশের বাইরেও জামদানীর সম্ভাব্য মার্কেট তৈরীর জন্য কাজ করছেন। মায়ের থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা, স্বামীর সহযোগীতা এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ স্যারের গাইডলাইন ছিল কাকলি তালুকদারের সফলতার চাবিকাঠি।
নিগার ফাতেমা
তিনি সবার কাছে এখন খেস কন্যা নামে পরিচিত। খেসের মতো একটা নাম না জানা তাঁতপণ্য কে তিনি সারাদেশের মানুষের সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন। খেস কাপড়ের উদ্ভাবন হয়েছিল বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতনে তার ছাত্রদের হাত ধরে, তাই এর ঐতিহাসিক একটা মূল্য আছে সেটা সম্পর্কে সবাইকে জানিয়েছেন এবং খেশের শাড়ি, পাঞ্জাবি ছাড়াও খেশের ব্যাগ, খেশের শাল, ছেলেদের শার্ট ইত্যাদি পণ্য ইনোভেশন করেছেন তিনি। তাই এই পণ্যের প্রতি সবার ব্যাপক আগ্রহ তৈরী হয়েছে। দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা হওয়ার আগে নিগার ফাতেমা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু মাতৃত্বকালীন প্রতিবন্ধকতায় সেটা ছেড়ে দিতে হয়। এরপরই তার এই উদ্যোক্তা জীবনের শুরু এবং এখন তিনি সফল একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সকলের কাছে অন্যতম উদাহরণ এবং অনুপ্রেরণা। স্বামীর সহযোগীতা এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ স্যারের গাইডলাইন ছিল তার এই সাফল্যের পেছনের শক্তি।
সালমা নেহা
পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং এর মাধ্যমে নিজেকে পরিচিত করে সালমা নেহা অনলাইন প্লাটফর্মের সকল উদ্যোক্তাদের কাছে একজন রোল মডেল হয়ে উঠেছেন। কোনো ধরনের বিজনেস ওয়েবসাইট বা পেইজ ছাড়াই উই গ্রুপে এক্টিভ থেকে মাত্র ৫ মাসে মিলিয়নার হয়ে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বে তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জব করতেন, কিন্তু ১০-৫টা চাকরি তার ভালো লাগত না। তিনি একজন স্বাধীনচেতা নারী হিসেবে আত্মপ্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়েই উদ্যোক্তা পেশায় যাত্রা শুরু করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী আদি চমচম, অন্যান্য আঞ্চলিক মিষ্টি, লিচু, আম নিয়ে এবং নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের ব্যান্ডিং পণ্য ’পনির’ নিয়ে কাজ করেন তিনি। কিছুদিন আগে থেকে শীতের শাল এবং শাড়ি নিয়েও কাজ শুরু করেছেন তিনি এবং ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন ক্রেতাদের থেকে। সালমা নেহার সাফল্যের নৈপথ্যেও পুরোপুরি অবদান রয়েছে ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ স্যারের, উনার নির্দেশেই তিনি পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং ফোকাস করে আজ সফল উদ্যোক্তা। আর পরিবারের সর্বোচ্চ সাপোর্ট তো আছেই। সালমা নেহা বর্তমানে টেকজুমের মোহাম্মদপুরের প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করছেন।
উম্মে সাহেরা এনিকা
পুরান ঢাকার মেয়ে এনিকার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন, কিন্তু ভাগ্য তাকে দেশিয় পণ্যের একজন সফল উদ্যোক্তা বানিয়ে দিল। ব্লক ও বাটিকের বিভিন্ন পণ্যকে বাংলাদেশের ৬৪টি জেলা সহ সারাবিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং বাংলাদেশের দেশীয় পণ্যের ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে একটি একটা শক্ত অবস্থানে দেখা স্বপ্ন তার এখন। এনিকার বাটিকের ফিউশন ক্রিয়েশন “বাটিক জুতা” বেশ সাড়া ফেলেছে ক্রেতামহলে। এছাড়া তিনি স্বপ্ন দেখেন পুরান ঢাকার ই-কমার্স নিয়ে। বর্তমানে টেকজুমের প্রতিনিধি হিসেবে পুরান ঢাকাতে যারা ই-কমার্সে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তিনি। ই-ক্যাবের ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রাজীব আহমেদ স্যারের গাইডলাইনই এনিকার পথচলার সঙ্গী।
আরিফা খাতুন
অনেক প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে ময়মনসিংহের আরিফা খাতুন আজ সফল দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা। প্রথমে মাত্র হাতখরচের ৫০০ টাকা নিয়ে তার উদ্যোগের যাত্রা শুরু হয়েছিল। বাচ্চাদের ড্রেস নিয়ে কাজ শুরু করলেও, একে একে ব্লকের শাড়ি, ব্লকের ফ্যামিলি কম্বো ড্রেস এবং জামদানী নিয়ে তার উদ্যোগের পথ চলা, যার পরিচালনায় সর্বাত্মক সহযোগী রাজীব আহমেদ স্যারের গাইডলাইন। ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ গ্রুপের নিয়মিত শিক্ষার্থী তিনি, যেখান থেকে নিজের ই-কমার্স বিষয়ে বেসিক স্কিল ডেভেলপ করছেন, স্টার্ট আপ সম্পর্কে পড়ছেন, যা তাকে সফল একটা স্টার্ট আপ শুরু করতে সাহায্য করবে। আরিফার ইচ্ছা নিজের সফল কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আর্থিকভাবে অসচ্ছল নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, দেশীয় ঐতিহ্য জামদানিকে সবার সামনে তোলে ধরা, সেই সঙ্গে জামদানি নিয়ে শক্তিশালী একটি ব্র্যান্ডিং তৈরি করা। আরিফা খাতুন বর্তমানে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের টেকজুম প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন ই-কমার্সের মাধ্যমে নিজ বিভাগের অঞ্চলভিত্তিক পণ্য এবং এর উদ্যোক্তাদের তুলে ধরা এবং সব ধরনের সমস্যার সমাধানে কাজ করার লক্ষ্যে।
উপরোক্ত ৫জন উদ্যোক্তা নারীর জীবনেই অনেক বাঁধা, প্রতিকূলতা আর উত্থান-পতন এসেছে, তবে তারা হার না মেনে, পেছন ফিরে না তাকিয়ে শুধু কাঙ্খিত স্বপ্নের দিকে ফোকাস করে পথ চলেছেন, নিজের উদ্যোগ, ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি, প্রযুক্তি এবং বিজনেসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টপিক নিয়ে নিয়মিত স্টাডি করে নিজেদের দক্ষ করে যাচ্ছেন যেন নারী বলে কোথাও আটকে যেতে না হয়। আর তাই তারা আজ সফলদের কাতারে আসতে পেরেছেন। আর যা না বললেই নয়, তারা সফল নারী পরিবারের দায়িত্ব্য পালন করেই হয়েছেন। একজন সফল উদ্যোক্তার পাশাপাশি তাদের পরিচয় তারা প্রত্যেকেই একজন আদর্শ মা, আদর্শ স্ত্রী এবং আদর্শ বৌ মা। পারিবারিক সম্পর্কগুলো কিন্তু তাদের স্বাধীন পরিচয় তৈরীতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় নি, আর শুরুর দিকে বাঁধা আসলেও নিজের যোগ্যতা প্রমানের পর পরিবার থেকে হাসিমুখেই সাপোর্ট করেছে এবং সর্বোচ্চ সহযোগীতাও করে যাচ্ছে। সুতরাং অধিকার আদায়ের জন্য ভয়েস রেইজ করার পাশাপাশি প্রত্যেকটা নারীর উচিত নিজেকে দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলা। তবেই অধিকার, সম্মান আর সামাজিক মর্যাদা কোনো কিছুরই ঘাটতি হবে না।
আর এই করোনার সময়কালে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল যাত্রা স্বরূপ ই-কমার্সের মাধ্যমে নগরসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী উদ্যোক্তাদের বিপ্লব ঘটেছে। রান্নাবান্নার কাজের সীমাবদ্ধতা ছাড়িয়ে অনলাইনে ব্যবসা করে সংসারের আর্থিক স্বচ্ছলতায় ভূমিকা রাখতে পারছেন এসব নারী উদ্যোক্তারা, যা পরিবারের সমৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে।
আর বিশ্বের নারী নেতৃত্বের অন্যতম উদাহরণ হিসেবে কারো নাম বলতে হলে প্রথমেই আসবে আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা। তিনি বিশ্বের ক্ষমতাধর একজন নারী নেতৃত্ব হিসেবে ফোবর্সে এসেছিলেন ২০১৬ সালে এবং ২০২১ সালে তিনি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের সরকার প্রধানদের মধ্যে সবচেয়ে অনপ্রেরণাদায়ী তিন নারী নেতার একজন নির্বাচিত হয়েছেন। বাঙালি নারীদের অনুপ্রেরণায় তিনি অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
নারী দিবস, নারী অধিকার আর দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে কিছুসংখ্যক নারীর মতামত জানতে চেয়েছিলাম। তাদের প্রায় সবাই নারী দিবসের গুরুত্ব আলাদাভাবে খুঁজে পান না, তাই এই দিবস কখনো তাদেরকে আকৃষ্ট করে নি। তাদের মতে পরিবার সমাজ যদি নারীদেরকে বুঝতে না পারে, তবে একটা নির্দিষ্ট দিন কখনোই নারীদের বর্তমান ভবিষ্যৎ বদলে দিতে পারে না। পরনির্ভরশীল হতে লজ্জাবোধ করেন নারীরা, তাই নিজের একটা আত্মপরিচয় তৈরীতে পরম আকাঙ্ক্ষিত থাকেন প্রতিটি নারী। তারা খুব বেশি কিছু চান না কাছের মানুষগুলোর কাছে, শুধু চান একটু নিরব সমর্থন, মতামতের গুরুত্ব আর সম্মান।
একজন নারী হিসেবে আপনি সমাজ এবং পরিবারের কাছে কি চান এবং নারী অধিকার, দায়িত্ব্য- কর্তব্য বলতে কি বোঝেন জানতে চাইলে, শাকিলা আক্তার শান্তা বলেন, “নারী হিসেবে আমি আমার সমাজ ও পরিবার থেকে সাপোর্ট চাই। ছোট থেকেই পুস্তক ও বাস্তব জীবনেও দেখে এসেছি, শুনে এসেছি নারীরা অবহেলিত। তাদের নিজস্ব চিন্তা, তাদের কিছু করার আকাঙ্খা অনেক কারণে চাপা পড়ে যায়। যদি আমাদের সমাজ ও পরিবার নারীদের উৎসাহিত করে, সাপোর্ট করে তবে নারীরা নিজেদের পাশাপাশি দেশ ও মানুষের সহায়তা করতে পারবে৷ তাই সমাজ ও পরিবার থেকে নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশী সাপোর্ট প্রয়োজন।মানুষ বলতেই নারী পুরুষ উভয়ই। মা, বোন, স্ত্রী, শাশুড়ী, দাদী, নানী ইত্যাদি সকল চরিত্রে নারীরা তাদের সর্বোচ্চ মমতা, ধৈর্য, সততা, ভালোবাসা দিয়ে আমার দৃষ্টিতে সকল স্বাবলম্বী, ধৈর্যশীল ও গতিশীল নারীই আদর্শ নারী। একজন নারী তথা একজন মানুষ হিসেবে সমাজ ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ববান হওয়া উচিত। একটা মানুষ সব সময় চায় তার পরিবার, পরিবেশ, সমাজ সবার সাথে সহযোগী হয়ে থাকতে।আমার জন্য পরিবারকে ও সমাজকে সকল সৎকাজে সহায়তা করে আগামীতে সুন্দর ও আরো বেটার সমাজ ও পরিবার গঠন করাই মূল দায়িত্ব।”
শামীমা নাসরিন রিতু বলেন, “আসলে আমরা নারী, আমরাই পারি। একটা নারীর হাতেই সর্বোচ্চ সুপ্রীম পাওয়ার ন্যস্ত। আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা নিজেরাই অনুধাবন করতে পারিনা বলে পিছিয়ে থাকতে হয়। আমরা গৃহকোণের কর্ণধার তবুও আমাদের পদবী অনেক। অর্ধাঙ্গিনী, আয়া, টিচার ( নিজ বাচ্চার), বিউটি পার্লার।(নিজ সংসারের) রাধুনী ( নিজ সংসারের) নার্স (নিজ সংসারের) বাবুর্চি( নিজসংসারের) কাপড় ইস্ত্রী র কাজটাও আমরাই করি। এখনও জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করে কাজের ছেলের বাজারের ব্যাগটা নিজেকেই বহন করতে হয়। এগুলো আমাদের সার্বিক কার্যক্রম যা কেউ বুঝেনা, অনুভব করেনা।পাইনা সঠিক মূল্যায়ন টুকুও। একজন নারী শুধু গৃহকর্তৃ পরিচয়েও যে কত কি সাম্লে থাকে সে সবের খোঁজ কেউ রাখে না, অনুভব করে না। আমাদের শুধু এই মূল্যায়নটুকুই দরকার।”
ফাহারিয়া শারমিন বলেন- “একজন নারী হিসেবে আমি সমাজ এবং পরিবারের কাছে সমর্থন,সম্মান এবং মূল্যায়ন চাই। নারী শুধুমাত্র নারী হিসেবে না বরং একজন মানুষ হিসেবে মানুষের কাছ থেকে ভাল-মন্দের দিক বিচারে সমর্থন চাই। কোন প্রকার বৈষম্য নয় আবার দূর্বল মনে করেও না বরং কাজের মানদন্ড বিচারে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান এবং মূল্যায়ন করতে হবে – সমাজ এবং পরিবারের কাছে একজন নারী হিসেবে আমার চাওয়া এতটুকুই। আর একজন নারী হিসেবে আমি আমার পরিবারকে ভালভাবে গাইড করে দেশের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করব। আমার।সন্তানদের মাধ্যমে যেন দেশ ও দশের উপকার হয় অর্থাৎ সেবামূলক কাজে নিয়োগ থাকার কথা বলব।“
জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “নারী হিসেবে আমি সমাজ এবং পরিবারের কাছে সবসময় যোগ্য মর্যাদা পেতে চাই।শুধু নারী বলে কেউ কখনো আন্ডার ইস্টিমেট করবে অথবা অসহায় দুর্বল ভাববে তা আমি কখনো চাইনা। প্রাপ্য সম্মানটুকু সব জায়গা থেকে পেতে চাই।আদর্শবান নারী সব সময় নিজের এবং নিজের পরিবারের প্রতি যত্নশীল হয়। যেকোনো বিষয়ে ধৈর্যশীল এবং নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা রাখে। একজন আদর্শবান নারীর দায়িত্ব-কর্তব্য পুরুষের চাইতে অনেক বেশি বলে আমি মনে করি।তিনি শুধু পরিবার-পরিজনের স্বপ্নের পথকে সুগম করেন না নিজের স্বপ্নকে ও গুরুত্বসহকারে পরিচর্যা করেন। একজন নারী যখন মা হয় তখন সন্তানের গুরুত্ব থাকে সবার উপরে, আমিও এর ব্যতিক্রম নই আমার কাছে আমর সন্তানের প্রায়োরিটি সবার আগে। সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব আমার। মেয়েরা মেয়েদেরকে বেশি দাবিয়ে রাখতে চাই যা সুস্থ সুন্দর সমাজের পথে অন্তরায়। আমি নারী তাই অন্য নারীদের ভালো কাজে সব সময় সবার আগে সাপোর্ট করা, অনুপ্রাণিত করা আমার দায়িত্ব। যে সব নারী ঘরে এবং বাইরে নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে সঠিকভাবে পালন করে যেতে পারে এবং দিনশেষে ভালোবাসাময় পরিবারের সাথে শান্তিতে ঘুমোতে পারে তারাই সফল।”
সৈয়দা শেফালি বলেন, “একজন নারী হিসেবে আমি মনে করি আমাদের সমাজ ও পরিবার যদি একজন নারীকে দুর্বল না ভেবে তার পাশে থাকে তাহলে নারীরা তাদের কাজে সফল হতে পারবে। তাই সমাজের কাছে আমার এইটুকু চাওয়া যে পরিবারের অন্যরা ও সমাজের সবাই যেন নারীদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। কজন আদর্শ নারীর সর্বময় ক্ষমতা রক্ষা করার যোগ্যতা থাকতে হবে। কারন একজন নারী শুধু নারী নয় সে হলো একটি পরিবারে কন্যা, জায়া, জননী। কখনও কন্যার দায়িত্ব পালন করতে হয় অবনত মস্তকে শ্রদ্ধার সাথে। কখনও বা জায়া বা স্ত্রী হয়ে স্বামীর পাশে দাঁড়াতে হয় সমান শক্তি নিয়ে। কখনও বা স্নেহময়ী জননী হয়ে স্নেহের পরশের কঠোর শাসন দিয়ে নিশ্চিত করতে হয় আদরের সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। একটি সমাজে নারী কেবল নারী নয়। সে হতে পারে একজন শিক্ষিকা, ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, উকিল কিংবা ব্যাংকের ও সরকারি অফিসের উচ্চপদস্থ কোন কর্মকর্তা। “
সবশেষে, নারীদিবসে সকল নারীদের মতামতের প্রতি সম্মান আর সমর্থন জানাই এবং পরিবার সমাজের প্রতি তাদেরকে বোঝার চেষ্টা করার আহবান জানাচ্ছি, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা বিশ্বের সকল নারীদের প্রতি।