কঠোর নীতিমালা, বিলিয়ন ডলারের ওভারসিজ শেয়ার ভ্যালু হারানো এবং সরকারের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি চীনের টেক জায়ান্টদের বেশ বিপাকে ফেলছে।
সম্প্রতি চীনে অনলাইনে বিশৃঙ্খলভাবে ঋণ প্রদান এবং জায়ান্ট প্লাটফর্মগুলোর দ্বারা ব্যবসায়ীদের প্রভাবিত করা ও ভোক্তাদের তথ্যের অপব্যবহারের প্রতি সচেতনতা বেড়েছে। মূলত ফেসবুক, গুগল ও অন্য জায়ান্টগুলো বিভিন্ন ইস্যুতে তদন্তের মুখোমুখি হওয়ার ফলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দেশটিতে ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা, জেডিডটকম এবং মেসেজিং ও গেমিং জায়ান্ট টেনসেন্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বের দামি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। তবে তাদের এ সফলতাই বর্তমানে তাদের শত্রু হয়ে উঠেছে।
এশিয়া টেক স্ট্র্যাটেজি এর গবেষণা প্রধান জেফরি টসন বলেন, চীনে এটি কমিউনিস্ট পার্টির সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হলেও যুক্তরাজ্য সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে জনগণ তাকে মেনে নিত। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বেশ যুক্তিসঙ্গত।
গত অক্টোবরে আলিবাবার উদ্যোক্তা জ্যাক মা প্রকাশ্যেই চীনের নিয়ন্ত্রকদের সমালোচনা করেন। আলিবাবার সহযোগী প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের ব্যাপারে সতর্কতামূলক নির্দেশনা দেয়ার পর এ সমালোচনা করেন তিনি। এর পরই এ ব্যাপারগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে।
বর্তমানে অ্যান্ট গ্রুপের ‘আলিপে’ প্লাটফর্ম চীনের বহুল ব্যবহূত ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের একটি। খাবার থেকে শুরু করে রাইড, গ্রোসারি ও ভ্রমণ টিকিটের পেমেন্টেও আলিপে বহুল ব্যবহূত। নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ধীরগতি অ্যান্ট গ্রুপকে ঋণ প্রদান, সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও বীমা খাতে প্রসারিত করার সুযোগও দেয়।
ব্যবসায় ঝুঁকিসংক্রান্ত পরামর্শক সংস্থা ইউরেশিয়া গ্রুপ জানায়, ধীরে ধীরে এসব টেক জায়ান্টরা নিয়ন্ত্রক সংস্থার থেকেও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। ফলে তারা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে পাশ কাটিয়ে অনেক কিছুই করার সুযোগ করেছে। তাদের এ লক্ষ্য বেইজিংয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন আশা করছিল তারা অ্যান্ট গ্রুপ ও টেনসেন্টকে ব্যাংক ব্যবস্থার মতো কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে বাধ্য করবে। যাতে এসব গ্রুপকে তদন্ত ও আর্থিক দায়বদ্ধতার নীতিকাঠামোয় আনা যায়। তবে এসব জায়ান্ট গ্রুপগুলো এ প্রস্তাব সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছে।
ডিজেডটি রিসার্চের প্রধান বিশ্লেষক কে ইয়ান বলেন, তাদের অবশ্যই মূলধনের প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আর্থিক কোম্পানিও স্থাপন করতে হবে। তারা এসব কিছু এড়িয়ে যেতে পারে না।
এর আগে ওয়াল স্ট্রিস জার্নালের এক প্রতিবেদনে জানানো হয় যে চীন সরকার গণমাধ্যম থেকেও আলিবাবার শেয়ার প্রত্যাহারে চাপ প্রয়োগ করছে। এ নির্দেশনা চীনের টেক ফার্মগুলোর শেয়ারের মূল্যকে বেশ কয়েক ভাগে ভাগ করেছে। এ অবস্থায় জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারের নজরদারিতে বেশি পড়ছে। যেখানে মাত্র ২০ শতাংশ মার্কিন রিটেইলার অনলাইনে লেনদেন করে, সেখানে চলতি বছর চীনের অন্তত ৫০ শতাংশ কোম্পানিই অনলাইন লেনদেনে অন্তর্ভুক্ত। ফলে ব্যবহারকারীদের তথ্যের গোপনীয়তা নিয়েও ক্রমেই সতর্কতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে কে ইয়ান বলেন, আমি মনে করি না এ কঠোরতা শুধু জ্যাক মা এর জন্য প্রযোজ্য। বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। টেক জায়ান্টগুলোর ক্রমবর্ধমান প্রভাব চীনের জন্য নতুন কিছু নয়।
জেফরি টসন বলেন, বিশ্বব্যাপী অনেক সরকারই টেক জায়ান্টগুলোর প্রভাবের ওপর নজর রাখছেন। প্রত্যেকেই মনে করছেন টেক জায়ান্টগুলো ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। তিনি আরো বলেন, এ কঠোরতার মানে এই নয় যে তারা উদ্ভাবনকে দমন করতে চায়।
সম্প্রতি দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, অনলাইনে একচেটিয়া ব্যবসা ও আর্থিক বিশৃঙ্খলা দমনে সরকার আরো নজরদারি বাড়াবে।
ইউরেশিয়া গ্রুপ জানায়, চীন সরকারের এ কঠোরতা ছোট ছোট কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে আরো বেশি সুবিধা তৈরি করবে। একই সঙ্গে ভোক্তাদের তাদের সর্বোত্তম পণ্য বাছাই করার সুযোগ দেবে।