বুলেট কিংবা গ্রেনেড, অথবা মাটির নিচের মাইন সবকিছুই যেন দুর্ভেদ্য মার্সিডিজ জি৬৩ এএমজির কাছে। কীভাবে বাংলাদেশে এল বিশ্ব র্যাংকিং এ ২-৩ নম্বরে থাকা এ গাড়িটি?
সময়টা ২০০১ সাল। বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা প্রটোকল স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রত্যাহারের পাশাপাশি বিরোধী দলীয় নেত্রীর এসএসএফ প্রটোকলও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এতে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে আওয়ামী লীগ। আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা অর্থ যোগাড় করে একটি মার্সিডিজ জি৬৩ এএমজির গাড়ি পাঠায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য।
পরে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় শেখ হাসিনা গাড়িতে ওঠার পরও তিন দিক থেকে বেশকিছু গ্রেনেড হামলা করা হয় গাড়িটিকে লক্ষ্য করে। ফলে গাড়িটির একটি চাকা পাংচার হয় ও একটি জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে গাড়িটি ঠিকই নিরাপদে গন্তব্য স্থলে পৌঁছায়।
পরে এ গাড়ির পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগ পরবর্তীতে আরও দুটি একই মডেলের গাড়ি ক্রয় করে। হামলার শিকার হওয়া গাড়িটি বর্তমানে রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের কাজে ব্যবহৃত হয়। আর দুটি ওয়াগন মাঝে মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেন।
দেখতে অতি সাধারণ মনে হলেও কাজে একেবারেই অসাধারণ এই গাড়িটি।নিরাপত্তার কথা বলতে গেলে এতে রয়েছে ৩৬০ ডিগ্রি কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল। ৭×.৬২ মিমি এর বুলেট সাধারণ কোনও গাড়িতে একপাশ দিয়ে ঢুকে আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেলেও এই ওয়াগনটির রং এ আঁচড়ও ফেলতে পারবে না।
গ্রেনেড এর বিপক্ষে এর ক্ষমতা ২১ এ আগস্টেই প্রমাণিত, যদিও এখন আরও বেশি শক্তিশালী আর্মার্ড রয়েছে গাড়িটিতে। আর গতির কথা বলতে গেলে ০-১০০ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছায় মাত্র ৫.৭ সেকেন্ডে। যেখানে R-15 version 3 motorcycle এর ১০০ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছাতে সময় লাগে ১২ সেকেন্ড। এছাড়াও রয়েছে কিছু বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
আর এ গাড়ির সাধারণ ভার্সনটি দেশে আনতে ট্যাক্সসহ ১১ কোটি টাকার মতো পড়বে। কিন্তু আর্মার্ড ভার্সনটি কিনতেই খরচ হবে ১.২ মিলিয়ন ডলার। আর ট্যাক্সসহ ৩০ কোটি টাকা খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ মার্সিডিজ গাড়িটি বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। সরকারি কাজে বিএমডব্লিউ ৭ সিরিয়ালের গাড়ি ব্যবহার করেন। বিএমডব্লিউ ৭ সিরিয়ালের আর্মার্ড ভার্সনটি ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ বিশ্বের বেশিরভাগ সরকার প্রধান ব্যবহার করে থাকেন।