অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বন্ধে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টারের (এনইআইআর) কার্যক্রম। তিন মাস এ কার্যক্রম চলবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফা জব্বার বলেন, টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক সম্প্রসারণের পাশাপাশি ডিজিটাল অপরাধের বিস্তার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তা নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে অবৈধ হ্যান্ডসেট চোরাচালান ও ডিজিটাল নিরাপত্তা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এনইআইআর চালু করেছি, যা এসব ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, টেলিকম খাতে এনইআইআর একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। এই পদ্ধতিটি কার্যত দেশের জনগণকে প্রতারণা থেকে নিরাপদ রাখার অন্যতম হাতিয়ার। নতুন প্রবর্তিত এই পদ্ধতিতে যাতে জনগণ সামান্যতম ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারের মাধ্যমে এনআইআর প্রবর্তন একটি যুগান্তকারী ঘটনা। বাংলাদেশ ১৯৮৯ সালে মোবাইল যুগে প্রবেশ করলেও ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত মোবাইল ফোন ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রযুক্তি বান্ধব কর্মসূচির ফলে মোবাইলের মনোপলি ব্যবসা বন্ধ হয়। চারটি অপারেটরকে লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে মোবাইল ফোনকে সহজলভ্য করে সাধারণের নাগালে পৌঁছে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, এরই ধারাবাহিকতায় টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা হয়। টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি বিকশিত হওয়ায় দেশে আজ ১৭ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার হচ্ছে। মোবাইলে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে ইতোপূর্বে সিম ডাটাবেজ রেজিস্ট্রেশনের আনা হয়েছে। এই নিবন্ধন থাকায় অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এখন সিমের সঙ্গে এনইআইআরের মাধ্যমে মোবাইল সেট নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসছি।
তিনি বলেন, মোবাইল চুরি, ছিনতাই সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধ ছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা দেওয়া এ পদ্ধতি প্রবর্তনের মূল লক্ষ্য। প্রতিটি সেটের জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করতে হবে বিটিআরসিকে।
জনগণ কোনো অবস্থাতেই যেন ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান মোস্তাফা জব্বার। বলেন, এ বিষয়ে যেন কোনো অভিযোগ না আসে। কোনো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে যেন কোনো অভিযোগ না পাই। তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
এ সময় মোস্তাফা জব্বার জানান, মোবাইল ব্যবহারকারী অনেকেই শিক্ষিত নয়, রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে তাদের করণীয় আমাদেরকেই করতে হবে। এগুলোর জন্য গ্রাহকের ভোগান্তি হলে মহৎ কাজটির উদ্দেশ্য ম্লান হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোয়ালিটি অব মোবাইল সার্ভিস নিশ্চিত করতে, অবৈধ মোবাইল সেটের ব্যবহার বন্ধে এবং গ্রাহক সেবা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য মোবাইল সেটের তথ্যাদি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।
গত ২০১৯ সালের ১৩ মে বিটিআরসির বিভিন্ন কার্যক্রম সংক্রান্ত সভায় বিটিআরটির ব্যবস্থাপনায় এনইআইআর চালুর প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন, গ্রামীনফোনের সিইও ইয়াসির আজমানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা দেশের প্রযুক্তি বিকাশের ইতিহাসে এটিকে একটি অনন্য মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, মোবাইল হ্যান্ডসেট বিষয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধান ও যাবতীয় তথ্য মিলবে বিটিআরসির হেল্পডেস্ক ১০০ নম্বরে ফোন করে। এছাড়া near.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে সব ধরণের তথ্য পাওয়া যাবে।