লক্ষ্মীপুর ভূ-খন্ডে জনবসতি আদিপর্ব থেকেই গৃহস্থালির জন্য মাটির তৈরী জিনিস পত্রের চাহিদা শুরু হয়। এই ধারাবাহিকতা এলাকায় মৃৎশিল্পীরা আসেন এবং বসতি শুরু করেন। স্থানীয় ভাষায় কুমার নামে পরিচিত। এই জেলার প্রতিটি উপজেলায় কুমোর বাড়ি আছে। কুমারগণ কয়েক পুরুষ ধরেই হাঁড়ি পাতিল, মটকি, কলসি, বদনা, বইয়াম, মুচি বাতি আগুনের বোশি প্রভৃতি গৃহস্থালির জন্য জিনিস পত্র মেলার জন্য মাটির রং বেরঙের জিনিস তৈরী করেন। বাড়ির মহিলারাও এই শিল্পের সাথে জড়িত।
জেলা সদরের মজুপুরের পালকান্দির মৃত রমী পাল ও তার ভাইগন পূর্ব পুরুষের ধারা দীর্ঘকাল থেকে এই কাজ এখনো করছেন।
উত্তর বাঞ্ছানগরের কুমার বাড়ি, গঙ্গাপুর পাল বাড়ি, ধর্মপুর কুমার বাড়িতে শত শত বছর থেকে বংশ ধারাবাহিকতা এখনো কাজ চলছে।
ভবানীগঞ্জের ধর্মপুরে ১০-১৫ টি বাড়িতে মাটির সামগ্রী তৈরী হয়। রাধাপুর গ্রামের ১ টি বাড়ি থেকে ৪/৫ টি পরিবার, দালালবাজারের খোয়াসাগর দিঘীর পূর্ব পাড়ে ২/৩ টি পরিবার, মজুপুর গ্রামের ৪-৫ টি বাড়ি, চৌপল্লী গ্রামের ৪-৫ টি পরিবার, হামছাদীতে ২ টি বাড়ির ১০-১৫ টি পরিবার মৃৎ সামগ্রী তৈরীর সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
তাছাড়া রামগঞ্জের শৈরশৈ নামক এক গ্রামে ৬ টি পরিবার জড়িত এই শিল্পের সাথে জড়িত ।
আমার উপজেলা রায়পুরে যা আমি ছোটকালেই দেখেছি এবং এখনো দেখি বাজারের উপরে মৃ শিল্পের দোকান আছে সেখানের রামকৃষ্ণ পাল, মোহন বাঁশী পাল, মিনা পাল, শান্তি পাল গৃহস্থালির জিনিস বানানোর পাশাপাশি ফুল, পাখি, ফল, পশু ও মুখোশ তৈরী করে সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন।
রামগতির করণা নগরের চন্দ্র মোহন পাল কয়েক পূর্ব পুরুষ থেকে করতেন। বর্তমানে এ পরিবার উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে অন্য পেশা বেছে নিলে মাটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে নানান সমস্যার কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মৃৎশিল্প আসে। যেমন বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকার রায়ের বাজার, সাভার, টাঙ্গাইল ইত্যাদি জায়গা থেকে।
অবনতির কারণঃ লক্ষ্মীপুর মৃৎশিল্পের পূর্বের সেই জৌলুস আজ আর নেই। তখনকার দিনে মানুষের কাছে মৃৎশিল্পের কদর ছিলো অনেক বেশি। প্রতি বাড়িতেই মাটির কলস, হাঁড়ি-পাতিল মাটির থালা-বাসন নিয়মিত ব্যবহার্য ছিলো। বর্তমানে প্লাস্টিকের বিপুল ব্যবহারের কারণে মৃৎশিল্পের বিলুপ্তি হতে চলেছে।
নিম্নে কয়েকটি কারণ হলোঃ
১. বিদেশী শিল্প জাত দ্রব্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মৃৎশিল্পকে রক্ষা করা কঠিন।
২. মৃৎ সামগ্রী পরিবহনে খরচ বেশি হয়।
৩. ধাতব ও চিনা মাটির তৈরী সামগ্রী সহজলভ্য হওয়ায় মৃৎ সামগ্রীর কদর কমে গেছে।
৪. এই শিল্পের সাথে জড়িত মানুষদের অন্যদের কাছে কদর কমে যাওয়া।
ফলে কুমার বাড়ির নতুন প্রজন্ম তাদের পৈতৃক পেশা পরিবর্তন করছে। মৃৎশিল্প পরিবারের অনেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় পেশা পরিবর্তন করে নিলো যার জন্য অনেক পরিবারের মাটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে এখনো অনেক পাল পরিবার এ ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে।
আগামী দিনে যদি পৃষ্ঠপোষকতা করা যায় তাহলে লক্ষ্মীপুরের হারানো মৃৎশিল্পের পূর্ণঃজাগরণ সম্ভব।
যা ই-কমার্স সেক্টরে জেলা পণ্য হিসাবে অর্থনৈতিক অবদান রাখতে পারে।
নাসির উদ্দিন