এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে পাহাড়ি ঝর্ণা বেশ জনপ্রিয়। ঘন সবুজ অরণ্যের মাঝ থেকে আঁচড়ে পরা পানিতে ভেজার অনুভূতিটাই অন্যরকম। আর একসাথে পাঁচটি ঝর্ণা দেখার অভিজ্ঞতা! – এ তো সোনায় সোহাগা।
জি হ্যাঁ, একটি ঝর্ণা দেখতে গিয়ে আরো তিনটি ঝর্ণার দেখা পাওয়া যাবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলাতে।
পাহাড়, সমুদ্র, উপত্যকা, বন-বনানীর কারণে চট্টগ্রামের মতো বৈচিত্রময় ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশের আর কোন জেলার নেই। আর চট্টগ্রামে প্রবেশ করতেই তারই প্রমাণ মিলে “চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার” মিরসরাই উপজেলায়। এই উপজেলাতে রয়েছে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একাংশ। রয়েছে উপকূলীয় বনাঞ্চল,লেক, ঝর্ণাসহ নানান সেচ প্রকল্প ও স্থাপনা। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং দৃষ্টিনন্দন একটি ঝর্ণা হলো নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা।
নাপিত্তাছড়া, টিপরা খুম, কুপিটা খুম, বাঘবিয়ানী ঝর্না ও বান্দরখুম নামে মোট পাঁচটি প্রধান ঝর্ণা নিয়ে গঠিত এই নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা। স্থানীয় ভাষায় ঝর্ণাকে খুম বলা হয়। ঝর্ণায় যাবার যে ঝিরিপথ আছে তাই নাপিত্তাছড়া ট্রেইল নামে পরিচিত। এই ট্রেইলে ওই চারটি ঝর্ণা ছাড়াও আরও বেশ কিছু ঝর্ণা বা খুম রয়েছে। তুলনামূলক সহজ ট্রেইল হওয়ায় একটু কষ্ট করলে একদিনেই পুরো ট্রেইল হেঁটে উপভোগ করা সম্ভব। বর্ষায় সময় পাহাড়ি ঝর্ণাগুলে বেশ সুন্দরভাবে বহমান থাকে বলে বর্ষাকালেই এই ঝর্ণার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। তাই বর্ষাকাল কিংবা শরৎকাল এই ঝর্ণায় যাওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে সারাবছরই এই ঝর্ণাটি বহমান থাকে।
ভ্রমণ নির্দেশনা-
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারবাজার এলাকায় অবস্থিত। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস যোগে সরাসরি মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারি বাজার নেমে যেতে হবে। ট্রেনযোগে আসলে ফেনী স্টেশানে নেমে সেখান থেকে রিক্সা বা সিএসজি যোগে নয়দুয়ারি বাজার আসা যায়। ঢাকা – চট্টগ্রাম মহাসড়ক এর নয়দুয়ারী বাজার থেকে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণায় পৌছাতে সময় লাগে ৫০-৬০মিনিটের মত। নয়দুয়ারী বাজার থেকে ট্রেইল ঘুরে দেখার জন্যে প্রয়োজনে স্থানীয় কাউকে গাইড হিসেবে নেওয়া যায় কিংবা স্থানীয় কাউকে জিজ্ঞেস করলেই তারা পথ দেখিয়ে দিবে। তবে আপনার যদি ট্রেইল সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকে তাহলে নিজেরাই ট্রেকিং করতে পারেন। ট্রেকিং করার জন্য অবশ্যই এখান থেকে ছোট বাঁশ বা লাঠি কিনে নিতে হয়।
নয়দুয়ারী বাজার থেকে পূর্ব দিকের রাস্তা রেল লাইন পার হয়ে আরও কিছুদূর হেঁটে গেলে নাপিত্তাছড়া পাড়ার দেখা পাবেন। সেখান থেকে থেকে ঝিরি ও পাহাড়ি পথের ট্রেকিং শুরু হবে। এরপর ট্রেকিং ধরে সামনে আগাতে থাকলে একে একে টিপরা খুম, কুপিটা খুম, বাঘবিয়ানী ঝর্না এবং সর্বশেষ বান্দরখুম দেখতে পাবেন। ঝর্ণাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গভীর ঝর্ণা হলো কুপিটাখুম। আর নাপিত্তাছড়া ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা হলো বান্দরখুম। এই ঝর্ণায় মূলত পর্যটকরা গোসল করে থাকেন। নাপিত্তাছড়া ট্রেইলে ছোট বড় আরো নানার ঝর্ণা থাকায় এই ট্রেইলটি বেশ উপভোগ্য।
থাকা- খাওয়া
নয়দুয়ারী বাজারে তেমন ভাল খাবার হোটেল নেই। তবে ট্রেইলে যাবার পথে একটা ছোট হোটেল আছে, সেখানে যদি আগে থেকে কি খাবেন তার অর্ডার দিয়ে গেলে, তারা রান্না করে রাখে। এবং ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করে নেওয়া যায়। অথবা, সীতাকুণ্ড সদরে এসেও খাওয়া দাওয়া করেন অনেকে।
আর থাকার জন্য সীতাকুণ্ডে কয়েকটি হোটেল থাকলেও ভালো মানের হোটেলের জন্য চট্টগ্রাম শহরে চলে আসাই উত্তম।
-জুলিয়া আফরোজ
সত্ত্বাধিকারী – বর্ণিল রঙ্গন