রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের থ্রিজি ষ্পেটামের ৭৯ কোটি টাকা বকেয়া ভ্যাট প্রদান না করলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
প্রতিষ্ঠানটিকে ভ্যাট পরিশোধে চিঠি দেওয়া হলেও এ বিষয়ে কোন প্রকার সাড়া দিচ্ছে না। বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হতে পারে। সম্প্রতি এনবিআরের আওতাধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) থেকে এ ভ্যাট পরিশোধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভ্যাট পরিশোধ না করলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যাংক হিসাব জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। টেলিটক ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানায় এনবিআর।
সূত্র জানায়, এলটিইউ এর আওতাধীন টেলিটক বিটিআরসি থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থ্রিজি ষ্পেকট্রামের কিছু সেবা গ্রহণ করেছে। এ সেবার লাইসেন্স ফি, লাইসেন্স অ্যাকুইজিশন ফি ও রেভিনিউ শেয়ারিং ফি বা থ্রিজি ষ্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফির ওপর প্রযোজ্য প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ভ্যাট পরিশোধ করেনি। এ ভ্যাট পরিশোধে টেলিটককে প্রথমে প্রাথমিক ও পরে চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়া বা ভ্যাট পরিশোধ করা হয়নি।
এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হয়েও ভ্যাট পরিশোধ না করা এবং কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব না দেওয়া দুঃখজনক। চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করা হয়েছে। বকেয়া পরিশোধ না করলে ভ্যাট আইন অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হবে। আমরা বিটিআরসিকে অনুরোধ করেছি এ ভ্যাট পরিশোধে সহায়তা করার। আশা করবো বিটিআরসি সহায়তা করবে।
উল্লেখ; টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে সিম কার্ডের উপর প্রায় ৮৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা, ২০০৭ সালের জুলাই থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত দাখিলপত্র নিরীক্ষা করে ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা, বিধি বর্হিভূত রেয়াত গ্রহণ করা ১৫ কোটি ১৬ লাখ টাকার তিনটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, কোন প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত দাবিনামা জারির পর তিন মাসের মধ্যে আবার নোটিস জারি করা হয়। সে সময় ভ্যাট পরিশোধ না করলে ব্যাংক হিসাব জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে। নিয়ম অনুযায়ী, এলটিইউ চূড়ান্ত দাবিনামা জারির পর দুইবার টেলিটককে নোটিস দেওয়া হয়। কিন্তু টেলিটক কর্তৃপক্ষ কোন জবাব দেয়নি। সর্বশেষ চলতি মাসের ৩ মার্চ টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ভ্যাট কর্তন ও জমাদানে ব্যর্থতার জন্য সেবা সরবরাহকারী এবং গ্রহণকারী উভয়ই সমানভাবে দায়ী। এ অবস্থায় থ্রিজি ষ্পেকট্রাম সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য মূসক বাবদ ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অনতিবিলম্বে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য বলা হলো। অন্যথায় ব্যাংক হিসাব জব্দসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
টেলিটক ছাড়াও বিটিআরসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, ‘২০১৪-১৫ অর্থবছরে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে থ্রিজি ষ্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি বাবদ জুন পর্যন্ত এক হাজার ৫৮৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিটিআরসির বকেয়া রয়েছে। এ বকেয়া পাওনার উপর এনবিআরের উৎসে মূসক/ভ্যাটের পরিমাণ প্রায় ৭৯ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ এ সরকারি রাজস্ব না আদায় করেই বিটিআরসি টেলিটককে সেবা অব্যাহত রেখেছে; যা দুঃখজনক।’